কালনা: প্রয়াত হলেন কালনা শহরের গরিবের ৫ টাকার ডাক্তারবাবু নামে পরিচিত ডাক্তার গৌরাঙ্গ গোস্বামী। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। শনিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিট নাগাদ কলকাতার আরএন টেগোর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই চিকিৎসক। গত ২৬ অগস্ট অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই গৌরাঙ্গবাবুকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জানা গিয়েছে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
চিকিৎসার পরিষেবা নিয়ে রোগীর পরিবারের অভিযোগের অন্ত নেই। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, বেশি টাকা নিয়ে অপারেশনের মতো নানাবিধ ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাঠগড়ায় তোলা হয় চিকিৎসকদেরই। রোগীমৃত্যুর পর তো ডাক্তারদের গায়ে হাত তোলাও আকছার ঘটছে। এসবের মধ্যেই অন্যরকম এক চরিত্র কালনার গৌরাঙ্গ গোস্বামী। ১৯৭২ সালে এমবিবিএস পাশ করা এই ডাক্তারবাবু প্রতিদিন ২০০-র বেশি রোগী দেখতেন। আর ভিজিট? মাত্র পাঁচ টাকা! হ্যাঁ, এই বাজারেও মাত্র ৫ টাকাতেই চিকিৎসা করে এসেছেন তিনি। আর কেউ যদি সেটুকু টাকাও দিতে না পারেন, তাহলেও চিকিৎসায় আপত্তি নেই গৌরাঙ্গবাবুর। বরং প্রয়োজনে নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে রোগীর পথ্যেরও ব্যবস্থা করে দিতেন এই ডাক্তারবাবু। সেই চিকিৎসকের মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া কালনায়।
কালনা শহরের ফটক দুয়ারের বাড়িতে স্ত্রী ও এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে গরিব দরদী চিকিৎসক গৌরাঙ্গ গোস্বামীর সংসার। বাবা বিশ্বম্ভর গোস্বামীর কথামতো চিকিৎসক হওয়ার পর গরিব-দুঃখীদের জন্যই সাম্মানিক মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে রোগী দেখা শুরু করেন গৌরাঙ্গবাবু। প্রতিদিন ভোর থেকেই রোগীরা ভিড় জমাত চিকিৎসকের বাড়ির সামনে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে রোগী দেখা ছাড়াও রাত-বিরেতে রোগী দেখতে তাঁদের বাড়িতেও যেতেন তিনি। সেই ডাক্তারবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ তাঁর বাড়ির চেম্বারে এসে সকাল সকলে উপস্থিত হয়েছেন। প্রিয় ডাক্তারবাবু আর নেই, আর কোনওদিন তিনি তাঁদের দেখবেন না, এটা যেন বিশ্বাসই করতে চাইছেন না স্থানীয়রা।
তবে শুধু চিকিৎসকই নন, গৌরাঙ্গবাবুর আরও একটি পরিচয় আছে। সেটা রাজনৈতিক। গত ৪০ বছর ধরে কালনা শহরে প্র্যাকটিস করার সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করেছেন এই মানুষটি। রোগী দেখার সঙ্গে সঙ্গেই পুরোদমে দেখতেন সিপিএমের যুব সংগঠনের কাজ। ১৯৮৮ সালে কালনা শহরের সিপিএমের লোকাল কমিটির প্রথম সম্পাদক হন ডাক্তার গৌরাঙ্গ গোস্বামী। তার পর নয়ের দশকে কালনা পৌরসভার কাউন্সিলরেরও দায়িত্ব সামলেছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন পূর্ত বিভাগেও। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কালনা পৌরসভার চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন এই গরিবের পাঁচ টাকার ডাক্তার। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি কালনা শহরের সিপিএম-এর এরিয়া কমিটির সম্পাদক পদে বহাল ছিলেন। প্রিয় চিকিৎসক ও প্রিয় নেতার মৃত্যুতে কালনা শহরে আজ শোকের ছায়া। আরও পড়ুন: ‘আত্মহত্যা নয়, খুন’, থানার কোয়ার্টারে নিজের ঘরে উদ্ধার পুলিশকর্মীর ঝুলন্ত দেহ!