মন্তেশ্বর : একই বাড়িতে থেকে তিনজনের দেহ উদ্ধার। সকাল থেকেই বাড়িতে কারও কোনও সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। আর তাতেই সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই উদ্ধার হয় মামা, ভাগ্নে ও দিদির দেহ। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বরের খাদরা গ্রামে। মৃতদের নাম উৎপল চট্টোপাধ্যায়, মালবিকা চক্রবর্তী এবং কৌশিক চক্রবর্তী।
প্রতিদিন সকাল হলেই বাড়ির বাইরে কাউকে না কাউকে দেখা যেতই। দেখা না গেলেও বাড়ির ভিতর সাড়া শব্দটুকু অন্তত পাওয়া যেত। কিন্তু আজ সকাল থেকেই বাড়িটা নিস্তব্ধ। বাড়ির বাইরে কারও দেখা নেই। টু শব্দটুকুও নেই বাড়ির ভিতরে। যেন বাড়ির ভিতরের মানুষগুলো সব উধাও হয়ে গিয়েছে। এমনটা আর কোনওদিন হয়নি। তখন থেকেই সন্দেহ হতে শুরু করে প্রতিবেশীদের।
পরে বেলা আর একটু গড়াতেই বাড়ির পরিচারিকা আসেন সময় মতো। কিন্তু তিনিও বার বার ডাকাডাকি করার পরেও কারও কোনও সাড়া শব্দ পাননি। সন্দেহ আরও তীব্র হয় প্রতিবেশীদের। এদিকে সদর দরজাতেই তালা নেই, যা দেখে মনে হতে পারে যে বাড়িতে সম্ভবত কেউ নেই। আর দেরি না করে খবর দেওয়া হয় পুলিশে। মন্তেশ্বর থানার পুলিশ এসেও বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কা দেয়। কিন্তু তাতেও কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে, দরজা ভাঙতে বাধ্য হয় পুলিশ। ভিতরে ঢুকতেই আশঙ্কাটা সত্যি হয়। ঘরের সিলিং ফ্যানের থেকে ঝুলছে উৎপল চট্টোপাধ্যায়ের প্রাণহীন দেহ। পাশে পড়ে রয়েছে একটি টুল। আর খাটের উপর মশারির ভিতরে পড়ে রয়েছে মালবিকা চক্রবর্তী এবং তাঁর ছেলে কৌশিক চক্রবর্তীর দেহ।
খাটের পাশেই একটি জায়গা থেকে ঘুমের ওষুধের একটি প্যাকেট পাওয়া গিয়েছে। যা থেকে পুলিশের অনুমান, ওই ঘুমের ওষুধ খাইয়েই দিদি মালবিকা চক্রবর্তী এবং ভাগ্নে কৌশিক চক্রবর্তীকে খুন করেছে উৎপল চট্টোপাধ্যায়। আর তারপর সে নিজেও সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে আত্মঘাতী হয়েছে বলে অনুমান করছে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ। তবে ঠিক কী কারণে ওই তিনজনের মৃত্যু হল, তা নিয়ে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলছে না পুলিশ। দেহ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে, তবেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।
এদিকে পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত মালবিকা চক্রবর্তীর স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁদের যে চা পাতার ব্যবসা রয়েছে, তার দেখভাল করতেন উৎপল। সেই কাজের সূত্রে কলকাতায় থাকতেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসায় তেমন লাভ হচ্ছিল না, বরং ক্ষতির বোঝা চাপছিল। আর সেই কারণে কলকাতা থেকে খাদরা গ্রামে ফিরে আসেন উৎপল। এদিকে আর্থিক অনটনের দেরে মাঝেমধ্যেই দিদি মালবিকার সঙ্গে কথা কাটাকাটি, ঝগড়া লেগেই থাকত উৎপলের।
প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, সেই আর্থিক অস্বচ্ছলতাকে কেন্দ্র করে যে অশান্তি, তার জেরেই দিদি ও ভাগ্নেকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে খুন করেন উৎপল। আর তারপর সে নিজেও আত্মঘাতী হয়। এদিকে মৃতদের পরিবারের তরফেও সেই কথাই বলা হচ্ছে, দিদি ও ভাগ্নেকে খুন করে নাকি নিজে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ব্যক্তি।