জামালপুর: কাজের খোঁজে বাংলা থেকে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু। দিনমজুরের কাজও জুটেছিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা পলাশ অধিকারীর। স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ভারথুর (varthur) থানার সুলিবেলে গ্রামের কায়েন খানের ডেরায় থাকতেও শুরু করেন। কিন্তু, দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের এক টুকরো সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে গোটা পরিবারেকে আটক করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তারপর থেকে জেলেই দিন কাটছে অসহায় দম্পতি পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারীর।
অভিযোগ, পুলিশের কাছে বারাবার দরবার করেও মেলেনি মুক্তি। তাঁরা যে বাংলার বাসিন্দা তাও পুলিশকে বোঝাতে সক্ষম হননি। অবশেষে প্রমাণের খোজে বর্ধমানে আসে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তদন্তকারীরা এ রাজ্যে এসে বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে ঘুরে নথি সংগ্রহ করছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাঁদের করা মামলার জেরে বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি থাকা দম্পতি আদৌও কী বাংলাদেশি, নাকি তাঁরা প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক তা তাঁরা নিশ্চিত হতে চাইছেন।
সূত্রের খবর, পলাশ-শুক্লার আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামে। পলাশ ও তাঁর পরিবারের সবাই শ্রমিকের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। চলতি মাসের জুন মাসের শেষ দিকে পলাশ তাঁর স্ত্রী ও শিশু পুত্র আদিকে সঙ্গে নিয়ে কর্নাটকে যান। সঙ্গে যান বাবা পঙ্কজ অধিকারী এবং মা সবিতাদেবীও। দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে বেঙ্গালুরুর কায়েন খানের অধীনে কাজ করা শুরু করেন তাঁরা। হোটেল, সিনেমা হল সহ বিভিন্ন জয়গা থেকে বোতল, প্লাস্টিক সরঞ্জাম এইসব বাছাই করাই ছিল তাঁদের প্রধান কাজ। এভাবেই কাটছিল দিন।
সূত্রের খবর, গত ২৭ জুলাই ভারথুর থানার পুলিশ কায়েন খানের ডেরায় হানা দেয়। সেখানে যাঁরা যাঁরা বাংলাভাষী ছিল তারা সবাই নাকি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, এমন সন্দেহে ভারথুর থানার পুলিশ পলাশের পরিবার-সহ আরও পাঁচ জনকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়। ওই সময়ে পলাশের পরিবার ভারথুর থানার পুলিশকে জানান তাঁরা কেউই বাংলাদেশি নন। তাঁরা নিজেদেরকে ভারতীয় বলে জানিয়ে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড দেখান। সেইসব দেখে পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা-মাকে ছেড়ে দিলেও রেহাই পাননি পলাশ -সহ বাকিরা। উল্টে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শিশুপুত্র আদিকে সঙ্গে নিয়েই বেঙ্গালুরুর জেলে দিন কাটছে পলাশ-শুল্কার। এখন কর্নাটক পুলিশ বাংলায় আসায় নতুন করে মুক্তির আশায় দিন গুনছেন তাঁরা।
ঘটনা প্রসঙ্গে পলাশের বোন শম্পা হালদার বলেন, “বাংলাদেশি সন্দেহে ওদের তিনমাসের বেশি সময় ধরে আটকে রেখেছে। ওখানকার তিনজন পুলিশ এসেছিলেন। আমাদের বাড়ি দেখে যান। থানা-বিডিওতে গিয়ে তদন্ত করছে। আমরা চাইছি ওরা তাড়াতাড়ি ছাড়া পাক। আমাদের তো সব তথ্যই রয়েছে। আশা করছি আর ছাড়া পেতে সমস্যা হবে না।” জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,
“আমার ব্লকের তেলে গ্রামের বাসিন্দা এক দম্পতিকে ফরেনার্স এ্যাক্টে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা সেখানকার জেলে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বন্দি হয়ে রয়েছে। দম্পতি যে জৌগ্রামের তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা সেই বিষয়ে জামালপুর থানার পুলিশও রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশের কাছে।” ভারথুর থানার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা পুলিশ ও বিডিও-র সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি জামালপুরের জমি রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি দফতরের অফিস,জৌগ্রাম পঞ্চায়েতেও গিয়েছিলেন তথ্য যাচাইয়ের জন্য।