পূর্ব বর্ধমান: দুয়ারে সরকারের হাত ধরেই ঘরে ফিরলেন মৃত! দুয়ারে সরকারের শিবিরে গিয়ে রেশন কার্ড সংশোধনের আবেদন জানিয়ে এসেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরের এক পরিবার। এদিকে সে পরিবারেরই এক সদস্য তিন বছর আগে মারা যান। যাঁর রেশন কার্ডটি খাদ্য দফতরের কাছে জমা দিয়ে আসে তাঁর পরিবার। তা পেয়ে প্রাপ্তি স্বীকারও করেছিল সংশ্লিষ্ট দফতর। সম্প্রতি পরিবারের তিন সদস্যের রেশন কার্ড এসেছে। সঙ্গে এসেছে সেই মৃত ব্যক্তিরও রেশন কার্ড। এই ঘটনায় হতচকিত গোটা পরিবার।
হাটগোবিন্দপুরের বাসিন্দা সুশান্ত কুমার দত্ত ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের তরফে খাদ্যদফতরে রেশন কার্ড জমা দেওয়া হয়। রেশন কার্ড জমার প্রাপ্তিস্বীকার পত্রও খাদ্যদফতর থেকে পরিবারকে দেওয়া হয়। হাটগোবিন্দপুরের এই পরিবারের তিন সদস্যের রেশন কার্ডে নামের বানান ভুল ছিল। সেই বানান সংশোধন করার জন্য গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দুয়ারে সরকারের শিবিরে যান তাঁরা। এরপরই ঘটে তাজ্জব কাণ্ড!
দত্ত পরিবারের তিন সদস্য প্রশান্ত দত্ত, রাইকিশোরী দত্ত ও মদনমোহন দত্ত দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে আবেদন জানান। সেই সময় স্থানীয় হাটগোবিন্দপুর কলেজে এই দুয়ারে সরকার শিবির হয়েছিল। প্রায় পনের দিন আগে পঞ্চায়েতের তরফে তাঁদের বাড়িতে রেশন কার্ড পৌঁছে দেওয়া হয়। রেশন কার্ড হাতে পেয়েই চক্ষু চড়কগাছ তাঁদের। দেখেন, তিন বছর আগে মারা যাওয়া সুশান্তকুমার দত্তের রেশন কার্ডও এসেছে নতুন করে।
একইসঙ্গে অন্য সদস্যদের কার্ডগুলিতে প্রত্যেকের জন্ম তারিখ ২০২১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর দেখাচ্ছে। এই কার্ডগুলি হাতে পেয়ে মাথায় হাত পরিবারের। বিষয়টি জানাজানি হতেই পঞ্চায়েতের তরফে কার্ড ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন দত্ত পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কীভাবে তাঁরা ফেরত দেবেন এই রেশন কার্ড, তা নিয়ে চিন্তায়। হাটগোবিন্দপুর গ্রাম থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে বড়শুল গ্রামে পঞ্চায়েত সমিতি অফিস। সেখানে যেতে গেলে একদিনের কাজের ক্ষতি। পরিবারের কেউ মাঠে কাজ করেন, কেউ ধানকলে।
তবে এই খবর ছড়াতে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে জোর। বিজেপির দাবি, রাজ্যে ভুয়ো রেশন কার্ডের চক্র কতটা সক্রিয় তা এর প্রমাণ। বিজেপি নেতা শ্যামল রায় জানান, ভুয়ো রেশন কার্ড ও ভুয়ো ভোটার কার্ডে এই রাজ্য ছেয়ে গিয়েছে। এই কার্ডগুলি রাজ্যের শাসকদল নির্বাচনের সময় ব্যবহার করে ভোটে ফয়দা তোলে বলে অভিযোগ করেন শ্যামলবাবু। অবিলম্বে এই ধরনের ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিৎ বলে দাবি জানান তিনি। যদিও বিজেপির দাবি উড়িয়ে দিয়ে জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। আগে এই রাজ্যে ভুয়ো রেশন কার্ডের ভাণ্ডার ছিল। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সমস্ত ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: খালি হাতে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ১ কোটি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন দুই অটোচালক