পূর্ব বর্ধমান: শহরের অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙা, নেতাদের বাড়ির রাস্তা কিন্তু ঝাঁ ঝকঝকে! তেমনটাই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। অভিযোগ, ভোট চাইতে যে রাস্তাকে হাতিয়ার করেছিলেন নেতারা, তাঁদের চোখই এখন বন্ধ। উৎসব ময়দানের কাছে বিদ্যার্থী হাইস্কুলের সামনের রাস্তা হোক কিংবা পার্কাস রোড, শহরের অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙাচোরা। ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে রাস্তায়। যাতায়াত করতে গিয়ে বাসিন্দাদের হোঁচট খেতে হচ্ছে। সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে টোটো থেকে বাইক, সাইকেল আরোহী প্রত্যেককেই। ভাঙা রাস্তায় টোটো উল্টে যাচ্ছে। কখনও পথচারীর সঙ্গে ধাক্কা লাগছে। জখমও হচ্ছেন অনেকে। দিনের পর দিন ভোগান্তিতে বর্ধমান শহরের বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের আলমগঞ্জ রোড, বংপুর মোড়, তেজগঞ্জ, বাবুরবাগ, ইছলাবাদ, নীলপুরের মতো এলাকাতেও রাস্তা বেহাল। শহরের ‘প্রাণকেন্দ্র’ কোর্ট কম্পাউন্ড এলাকায় রাস্তা কেটে জলের পাইপ লাইন বসানোর পরে তা আর সমান করা হয়নি। কাটা রাস্তার উপরে মাটির স্তূপ করা হয়েছে। পুজোর আগে আলমগঞ্জ রোডে তৈরি হওয়া বড় বড় গর্তে ইট-পাথর ফেলা হয়েছিল।
সাম্প্রতিক নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পাথর উঠে গিয়েছে। এখন রাস্তা জুড়ে ধুলো। আবার একপশলা বৃষ্টি হলে রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। শহরের ব্যস্ততম রাস্তার মধ্যে একটি পার্কাস রোড। এই রাস্তার উপর সারাদিন প্রচুর গাড়ির যাতায়াত। পাশেই বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার, চার্চ, শপিংমল থাকায় এই রাস্তাদিয়ে প্রচুর মানুষ সারাদিন যাতায়াত করে।
শহরের অন্যান্য রাস্তার মতো এখানেও রাস্তার হাল বেহাল। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, শহরে জলের পাইপ বসানোর জন্য এখানে দু’বছর আগে রাস্তা খোঁড়া হয়েছিল, কিন্তু সেই রাস্তা মেরামত করেনি পুরসভা। যার জেরে প্রতিনিয়ত এখানে দুর্ঘটনা লেগে থাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে ভাঙারাস্তায় রাবিস দিয়েছেন যাতায়াতের সুবিধার্থে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সেখ মতিউর রহমান বলেন, “দুই বছর আগে রাস্তা খুঁড়ে দিয়ে গিয়েছে, কিন্তু মেরামত করার কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। পাশেই বর্ধমান পৌরসভা, আমরা জানিয়েছি। কিন্তু ভাঙা রাস্তার হাল ফেরেনি। প্রতিদিন এখানে দুর্ঘটনা ঘটে, তাই আমরা ব্যবসায়ীরা মিলে ভাঙা ইট ও রাবিস দিয়ে গর্ত বুজিয়েছি। কিন্তু সেটাতো আর পিচ রাস্তার সমতুল্য হতে পারে না।”
মতিউর অভিযোগ করেন, “নেতাদের বাড়ির সামনের রাস্তা মেরামত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শহরের অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙা পড়ে থাকছে। অবিলম্বে শহরের রাস্তা মেরামত করা উচিত।” এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, “বার বার বলার পরেও শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার হাল ফেরে না। দেখেশুনে মনে হয়, পুরসভা যেন নিদ্রায় রয়েছে।”
শহরের বেহাল রাস্তা নিয়ে পুরসভাকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “এই অদক্ষ সরকার দুর্নীতি করতে ব্যস্ত, তারই ফল শহরের এই রাস্তা। মানুষের সমস্যা নিয়ে এই সরকার ভাবে না।” সিপিএম নেতা দীপঙ্কর দে বলেন, “শহরের সমস্ত রাস্তাই যান চলাচল বা মানুষের চলাচলের অযোগ্য। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে অথচ পুরসভার কোন হেলদোল নেই। তৃণমূলের নেতারা নিজেরা গদি নিয়ে লড়াইয়ে ব্যস্ত, সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে তাদের কোন হেলদোল নেই।”
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করে পুরপ্রধান পরেশচন্দ্র সরকারের দাবি, “অধিকাংশ রাস্তা মেরামত হয়েগেছে। জলের কাজের জন্য যেখানে যেখানে রাস্তা খোঁড়া হয়েছিল সেখানে সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”