রায়না : গলসির পর এবার বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রায়নার বিধায়ক (Trinamool MLA) তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। শনিবার তিনি রায়না ২ নম্বর ব্লকের বড়বৈনান পঞ্চায়েতের আদমপুরে মা বিশালাক্ষ্মীর মন্দিরে পুজো দিয়ে দিদির দূত (Didir Doot) হিসেবে দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি শুরু করেন। কিন্তু পুজো দিয়ে শুভ কাজ শুরু করলেও দিনটা ভাল কাটেনি তাঁর। সূত্রের খবর, সকাল থেকে কর্মসূচি ঠিক ভাবে চললেও তাল কাটে বড়বৈনানের মণ্ডলপাড়ায় যাওয়ার পর। এলাকার বিধায়ককে কাছে পেয়ে গ্রামবাসীরা তাঁদের নানা সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। কেউ অভিযোগ জানান আবাস যোজনার ঘর নিয়ে, আবার কেউ ক্ষোভ জানান ১০০ দিনের কাজ নিয়ে। তাঁদের দাবি, কিছুই ঠিকমতো পাচ্ছেন না তাঁরা।
মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা জয়দেব চক্রবর্তীর অভিযোগ, তাঁর বাবার মাত্র বিঘে খানেক জমি আছে। বাবার বয়স ৭২ বছর। তবুও বার্ধক্য ভাতা মিলছে না। গ্রামের আরও ২৫ থেকে ৩০ জনের একই অবস্থা। তাঁরা সকলেই বার্ধক্য ভাতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু মিলছে না। একইসঙ্গে অন্য গ্রামে সজল ধারা চালু হলেও এই গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা এখনও মেটেনি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এদিনে প্রশাসনের কাছে বারবার দরবার করেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।
জয়দেব চক্রবর্তীর আরও অভিযোগ, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনটি স্কুলে শিক্ষা মিত্র হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে তাঁকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও গিয়েছিলেন তিনি। তবু কোনও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি পুজারির কাজ বেছে নিয়েছেন সংসার চালানোর জন্য। একইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা রূপা মণ্ডল অভিযোগ করেন এলাকার রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে। পাশাপাশি আশা কর্মীরদের কাজ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। বলেন, এলাকায় আশাকর্মীদের লিংক পারশন হিসেবে তিনি ২০০৭ সাল থেকে কাজ করেছেন। ফাইলেরিয়া টিকা থেকে বিভিন্ন টিকা দিয়েছেন এলাকায়। ২০১২ সালে তাঁদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। পাশ করে আশাকর্মী পদে যোগদানও করেন। তারপর মামলা হয়ে যাওয়ায় তিনি বসে যান। ফের ২০১৮ সালে পরীক্ষা হয়। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, পরীক্ষা হলেও তলায় তলায় নিজেদের পছন্দ মত লোকেদের নিয়োগ করা হয় ২০২২ সালে। এদিকে গ্রামবাসীদের একগুচ্ছ অভিযোগ শুনে অস্বস্তি বাড়ে বিধায়ক শম্পা ধাড়ার।
এদিন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি ঘুরিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোর্টে বল ঠেলে দেন। বলেন, “গত দেড় বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ আটকে রয়েছে। অনেক কাজের পরিকল্পনাও রয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত রাস্তা করা সম্ভব হয়নি। তবে গোট বিষয়টিই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখছেন।” এরপরই দলীয় কর্মীদের নিয়ে তিনি চলে যান কামারগড়িয়া হাইস্কুলে। সেখানে গিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি মিড ডে মিলের রান্নার জায়গাও ঘুরে দেখেন। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজও সারেন বিধায়ক। এদিনের কর্মসূচিতে বিধায়কের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রায়না ২ নম্বর ব্লকের যুব সভাপতি জুলফিকার আলী খান, রায়না ২ নম্বর ব্লকের সহ-সভাপতি বৈদ্যনাথ শীল, সহ-সভাপতি অরুন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুন্সী হাসিবুর রহমান, রায়না ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মুন্সি আসমা তারা বেগম। প্রসঙ্গত, সপ্তাহ খানেক আগে দিদির দূত হিসেবে গলসির জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে যান এলাকার বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই। কিন্তু গ্রামবাসীদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়ে তিনি গ্রামেই ঢুকতে পারেননি। শেষে মাঝ রাস্তা থেকেই ফিরে যান।