বর্ধমান: বসন্ত দ্বারে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে। এদিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অন্য প্রেমের দিন। সরস্বতী পুজোর পরের দিন তত্ত্বের ডালি আদান প্রদানের মাধ্যমে বন্ধুত্বের নিবিড় বন্ধন। গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে উড়ু উড়ু মনে বসন্তের ঢেউ। বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ডে বা প্রেম দিবস সরস্বতী পুজোর পরদিন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গোলাপবাগ চত্বরে রয়েছে একগুচ্ছ ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীনিবাস। সরস্বতী পুজোকে ঘিরে প্রতিবার উৎসবে মেতে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের এই ঐতিহ্য বেশ কয়েক দশকের। এই উৎসবের হাত ধরে মন দেওয়া নেওয়ার পালাও চলে পড়ুয়াদের মধ্যে। চকোলেট, মিষ্টি, ফুল ইত্যাদি উপহার দেওয়ার মোড়কে আসলে মনের মানুষকে মনের কথা জানানো। এটা সেই মিষ্টি সম্পর্ক। এ ভাবেই গার্গী, নিবেদিতা, সরোজিনী এবং মীরাবাঈ হস্টেলের কোনও ছাত্রীর সঙ্গে প্রতি বার মিলে যায় চিত্তরঞ্জন, অরবিন্দ, নেতাজি, বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্র ছাত্রাবাসের কোনও পড়ুয়ার মন। গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে সত্তরের দশক থেকে চলে আসছে সরস্বতী পুজোর পরদিন তত্ত্ব আদান-প্রদানের রীতিনীতি ।
পরস্পরের হস্টেলে গিয়ে দিনটিকে উৎসবের মত পালন করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এমনিতে সারাবছর ছেলেদের হস্টেলে মেয়েদের ও মেয়েদের হস্টেলে ছেলেদের ঢোকার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকে। ব্যতিক্রম সরস্বতীপুজোর কদিন।
বৃহস্পতিবার সকাল গড়াতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে দেখা যায় হাতে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে সাজানো তত্ত্ব নিয়ে ছাত্রাবাসে হাজির ছাত্রীরা। উল্টো দিকে ছাত্রদেরও দেখা যায় ছাত্রীবাসে ঢুকতে।
ঢাক, কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে পড়ুয়ারা নাচতে নাচতে হাজির হয় ছাত্রী ও ছাত্রাবাসে।রঙবেরঙের শাড়ি ও পাঞ্জাবি পড়ে বসন্তের দ্যুতি ছড়াচ্ছে পড়ুয়ারা। এবছর অবশ্য তারা পুজোয় আনন্দে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা। জমিয়ে যেমন পুজো হচ্ছে। তেমনি আড্ডা, গান বাজনা সহ গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে বসেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর।
এই প্রথা কবে, কেন চালু হয়েছিল তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেন না। অনেকেই মনে করেন, বছরের অন্য সময় ছাত্রী আবাসনে ছাত্রদের প্রবেশের খুব একটা সুযোগ থাকে না। সরস্বতী পুজোর সময় এক আবাসন থেকে অন্য আবসনে যাওয়ার সেই রুদ্ধদ্বার খোলা হয়। পুজোর পরের দিন এই তত্ত্ব আদান প্রদানের মাধ্যমে মনের মানুষের একটু কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়। তবে ছাত্রছাত্রীদের মতে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সুসম্পর্ক আরও নিবিড় হয়। তবে যে যাই বলুক, এই দিনতো প্রেমেরই দিন! তাই এদিন প্রেম নিবেদনের সুবর্ণ সুযোগ অনেকেই হাতছাড়া করতে চায় না।