মেমারি: তখন গভীর নিদ্রায় ডুব দিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার শিয়ালি গ্রাম। প্রথমে একজন, তারপর অনেকেই শুনলেন আওয়াজটা। রাত যত গভীর হচ্ছে ততই বাড়ছে কান্নার আওয়াজ। গভীর রাতে দামোদরের পাড় থেকে ভেসে আসা কান্নার আওয়াজে ভয় বাড়তে থাকে এলাকার বাসিন্দাদের মনে। সাহস করে কেউ কেউ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু, রহস্য ভেদ হতেই সকলের চোখ কপালে উঠে যায়। দেখা যায় নদীর পাড়ে বসে কাঁদছে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্র। কিভাবে সে ওই জায়গায় এল তার বর্ণনা শুনে শিউরে উঠলেন সকলে। জানা যায়, এক সাধুর পরামর্শ মেনেই ওই বাচ্চাটিকে নদীর পাড়ে একা ছেড়ে গিয়েছে তাঁর বাবা-মা, দাদু। সে যাতে আর দুষ্টুমি না করে সে কারণেই এ কাজ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। খবর যায় পুলিশে।
খবর পেয়েই স্বতঃপ্রনোদিত মামলা করে রায়না থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় তিনজনকেই। যদিও সহজে তাঁদের জানা যায়নি। পুলিশ জানতে পারে শিয়ালি গ্রামের একটি আশ্রমে রয়েছেন শিশুটির মা। সেখানে পুলিশ তাঁকে ধরতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল বলে খবর। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০ বছর ধরে গ্রামে রয়েছে ওই আশ্রমটি। সেখানেই যাতায়াত ছিল শিশুটির পরিবারের। তাঁদের বাড়ি নদিয়ার চাকদহে। মামার বাড়ি মেমারি থানা এলাকায়। সেখানে এলেই মা তাঁকে নিয়ে আসত আশ্রমে থাকা এক সাধুর কাছে। এবারে নিয়ে এলে তাঁকে রাতে নির্জন নদীর চড়ে ছেড়ে আসার পরামর্শ দিয়ছিলেন আশ্রমের এক সাধু।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই আশ্রমের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। শিশুটিকে পাঠানো হয়েছে হুগলির সিঙ্গুরের একটি হোমে। শিশুটির মা জানাচ্ছেন, আশ্রমের উপর তাঁদের অগাধ আস্থা। তাঁদের বাচ্চা দিনে দিনে আরও চঞ্চল হয়ে উঠছিল। তাই তাঁকে শোধকানোর জন্যই আশ্রমের কথা শুনে ছেলেকে নদীর পাড়ে রেখে এসেছিলেন।
ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: ওম প্রকাশ সিং। তিনি বলেন, বাচ্চারা এই বয়সে চঞ্চল হবেই। খুব বাড়াবাড়ি করলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তা সমাধানের উপায় আছে। কিন্তু তাই বলে এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এই কুসংস্কার থেকে বের হতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বর্ধমান শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, অন্ধবিশ্বাসের কবলে পড়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলে তা আরও জটিল হয়। এগুলো মানসিক বিকার। ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।