পূর্ব বর্ধমান: বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার ছিল পূর্ব বর্ধমানের বৈকুণ্ঠপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব। বেলাগাম গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে এবার অনাস্থা এড়াতে আগেভাগে পদত্যাগ করলেন পঞ্চায়েত প্রধান। যা নিয়ে বিজেপির কটাক্ষ, ভাগ বাটোয়ারায় পোষাচ্ছিল না। তাই এই সিদ্ধান্ত। যদিও তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি, কারও কথা শুনতেন না প্রধান। অনাস্থা আনা হয়েছিল। তার আগেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।
উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সহ বেশ কয়েকজন সদস্য-সদস্যা প্রধান শর্মিলা মালিকের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন। কিন্তু আইনগত জটিলতার কারণে সেসময় সেই অনাস্থা গৃহিত হয়নি। সেই থেকে বেশ কয়েকজন পঞ্চায়েতের সদস্য সদস্যা পঞ্চায়েতের কোনও মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেননি। ফলে এলাকার উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না। এই কারণ দেখিয়ে বেশ কয়েকবার প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে তাঁকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় অভিযোগও করেন প্রধান শর্মিলা মালিক। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। অনাস্থা নিয়ে আসা পঞ্চায়েত সদস্যরা কোনও উন্নয়ন বৈঠকে যোগ দিচ্ছিলেন না। ফলে এলাকায় কোন উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছিল না। উল্টে পঞ্চায়েত প্রধান তাদের সম্মান দেন না বলে অভিযোগ তোলেন পঞ্চায়েতের বেশ কিছু সদস্য। পঞ্চায়েতে পরিষেবা নিতে আসা মানুষজনের সাথে প্রধান দুর্ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ করেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপাল বিশ্বাস। এমনকি পঞ্চায়েতের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গেও তিনি একই রকম আচরণ করতেন। তাই প্রধানের বিরুদ্ধে তাঁরা অনাস্থা এনেছিলেন বলে জানান উপপ্রধান গোপাল বিশ্বাস। অবস্থা এমন জায়গায় যে পৌঁছয় যে অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধান।
পঞ্চায়েতের আরেক সদস্য হেমন্ত খাঁ প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। দুয়ারে সরকার শিবির চলাকালীন একসঙ্গে তিনটি প্যান্ডেলের বরাত এক ব্যক্তিকে অনৈতিক ভাবে পাইয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “দল করি সব কথা সবার সামনে তো বলা যায় না নিজে একা একা ডিসিশন নিত ও। কারও সঙ্গে আলোচনা করতেন না। গত এক বছর ধরে এরকম চলছিল। তাই বাধ্য হয়ে এই ব্যবস্থা নিই আমরা। দুইতলা পঞ্চায়েত ঘরে দরজা জানলা ভাঙা, অথচ আগে সিসিটিভি বসানো হল।”
যদিও বিজেপির কটাক্ষ, ভাগ বাটোয়ারার কারণে পঞ্চায়েত প্রধান পদত্যাগ করেছেন। বিজেপির বর্ধমান সদর জেলা কনভেনার কল্লোল নন্দনের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলের মানুষজন পঞ্চায়েত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। তাই প্রশাসনের উচিত অতিসত্ত্বর প্রশাসক নিযুক্ত করে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম স্বাভাবিক করা। তবে গোষ্ঠীদ্বন্দের কারণে প্রধান ইস্তফা দেয়নি বলে জানালেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। প্রধানের স্বামী বিএসএফে কর্মরত, প্রধান স্বামীর চাকরির সূত্রে অন্যত্র চলে যাবেন, সেই কারণেই ইস্তফা বলে জানালেন সভাধিপতি। এদিকে পদত্যাগী প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলে তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া গিয়েছে। আরও পড়ুন: ‘মারা গিয়েছেন তো আপনি’, নিজের ডেথ সার্টিফিকেট চাইতে যা শুনলেন বৃদ্ধার ‘হার্ট অ্যাটাক’ হওয়ার জোগাড়