‘মারা গিয়েছেন তো আপনি’, নিজের ডেথ সার্টিফিকেট চাইতে যা শুনলেন বৃদ্ধার ‘হার্ট অ্যাটাক’ হওয়ার জোগাড়

Allowance: দিব্যি বেঁচে রয়েছেন, হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন, কাজ করছেন। অথচ তাঁকেই মৃত ঘোষণা করে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি পুরসভায় নিজে গিয়ে সেই ডেথ সার্টিফিকেট নিতে গেলে বৃদ্ধাকে বলা হয়, 'বাড়ি চলে যান, নাহলে সত্যিকারে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।'

'মারা গিয়েছেন তো আপনি', নিজের ডেথ সার্টিফিকেট চাইতে যা শুনলেন বৃদ্ধার 'হার্ট অ্যাটাক' হওয়ার জোগাড়
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 31, 2021 | 7:53 PM

হুগলি: দিব্যি বেঁচে রয়েছেন, হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন, কাজ করছেন। অথচ তাঁকেই মৃত ঘোষণা করে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি পুরসভায় নিজে গিয়ে সেই ডেথ সার্টিফিকেট নিতে গেলে বৃদ্ধাকে বলা হয়, ‘বাড়ি চলে যান, নাহলে সত্যিকারে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।’ কেন এমন ঘটনা? মুখ খুলছে না পুরসভা। এদিকে নাছোড় বৃদ্ধা বলছেন, তিনি আবার যাবেন, নিজের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়েই আসবেন।

হুগলির ডানকুনি পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গীতা পাত্র। স্বামী গত হয়েছেন প্রায় তিন দশক আগে। আগে বার্ধক্য ভাতাও মিলত। কিন্তু হঠাৎই ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। গরিব সংসারে ওই টাকাটুকুর বড়ই দরকার তাঁর। তাই নিজেই কষ্ট করে পৌঁছে গিয়েছিলেন পুরসভায়। সেখানে গিয়ে গীতা জানলেন তিনি মারা গিয়েছেন!

তাঁর অভিযোগ, অজান্তেই মৃত্যুর শংসাপত্র (ডেথ সার্টিফিকেট) জমা পড়েছে ডানকুনি পুরসভায়। এবং সেটা নাকি করেছে তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী। তবে কে জমা দিল কেনই বা জমা দিল তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না বৃদ্ধা। জানান, ২৮ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। গত দশ বছর ধরে বিধবা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। তবে গত বছর অগস্ট মাস থেকে হঠাৎই ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, খুঁজতে গিয়ে গীতা দেখেন তিনি ‘মৃত’!তাই ভাতাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তিনি যে মৃত সেই শংসাপত্রের ফটোকপি পুরসভার কাছ থেকে দেখতে চাইলে তা দেখাননি পুরসভার কর্মীরা। এই বয়সে এখন পরিচারিকার কাজ করে দিন গুজরান হচ্ছে প্রৌঢ়ার।

তাঁর কথায়, “আগে বার্ধক্য ভাতা পেতাম। এখন আর পাই না। আমার মৃত্যুর সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের ছেলেরা। আমাকে বলেছে, আপনাকে দেওয়া যাবে না। পৌরসভায় কম্পিউটারের ছেলেটা বলছে, আপনি আশাই করবেন না।” বৃদ্ধা বলে যান, “আমি বলি, তাহলে আমাকে ডেথ সার্টিফিকেটের ফটোকপি দিন। এর জবাবে পুরসভার এক কর্মী বলেন, বাড়ি চলে যান। শুনলে আপনার সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।”

কিন্তু কেন ভাতা বন্ধ, তার কারণ এখনও জানেন না গীতা দেবী। তাঁর কথায়, ‘আমি গিয়ে আবার বলব, হয় আমার বাার্ধক্য ভাতা দাও নইলে আমার ডেথ সার্টিফিকেট দাও।’ বৃদ্ধা জানান, এতদিন ওই ভাতার টাকা আর দু’একটা বাড়ির পরিচারিকার কাজ করে চলে যেত সংসার। এখন জীবিত হয়েও মৃত্যুর শংসাপত্র জমা পড়ায় যন্ত্রণায় পড়েছেন। পুরসভা থেকে ব্যাঙ্ক সব জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বারবার পুরসভার দুয়ারে ঘুরে একবার এককালীন দু’হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই শেষ।

এ নিয়ে ডানকুনি পুরসভার প্রশাসক অচিন্ত্য কর্মকার বলেন, “এরকম একটা অভিযোগ পেয়েছি, পুরসভার দিক থেকে কোনো প্রযুক্তিগত ভুল হয়েছে কিনা দেখতে হবে। তবে যাই হোক ওই মহিলা তার ভাতা যাতে পান তার ব্যবস্থা করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে বিজেপি কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। বিজেপি ডানকুনি মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত মাঝি বলেন, একটা জীবিত মানুষকে কীভাবে মেরে দিল, কে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট, কোথা থেকে পেল,পুরসভাতে জমাই বা কীভাবে পড়ল তার তদন্ত করা দরকার। মানুষকে মেরে দিয়ে তার ভাতা আত্মসাৎ করে নিচ্ছে পুরসভা। এরকম ঘটনা হয়ত আগেও ঘটেছে। তবে কেউ প্রতিবাদ করেনি। এখন তিনি প্রতিবাদ করায় আমরা জানতে পারছি। আমরা পাশে দাঁড়াব। আরও পড়ুন: ‘লোক দেখাতে এই সব কাজ করছে দিদিমনি’, ঘাটাল মাস্টাল প্ল্যান নিয়ে তৃণমূলের পদক্ষেপকে কটাক্ষ দিলীপের