পূর্ব বর্ধমান: কিছুদিন আগে পূর্ব বর্ধমানেরই কেতুগ্রামে ঘটেছিল নৃশংস সেই ঘটনা। রেণু খাতুনকে চাকরি করতে দেবেন না বলে তাঁর স্বামী কবজি থেকে হাত কেটে নিয়েছিলেন। আরও একবার শিরোনামে এই জেলা। এবারও স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে চাকরি না করতে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, স্ত্রীকে চাকরি করতে দেবেন না বলে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন স্বামী। শক্তিগড় থানার জোতরাম এলাকার এই ঘটনায় রাহুল মিশ্র নামে ওই যুবককে শনিবার গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। যদিও রাহুলের পরিবারের দাবি, এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। বরং তাদের বক্তব্য, বাড়ির বউ চাইত ছেলেকে নিয়ে সবসময় আলাদা থাকতে। কিন্তু রাহুল তাতে রাজি হত না। অভিযোগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
রবিবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। আপাতত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে রাহুলকে। মঙ্গলবার ফের তাঁকে আদালতে তোলা হবে। খণ্ডঘোষ থানার কালনা গ্রামের বাসিন্দা নীলকান্ত চট্টরাজের মেয়ে ব্রততী চট্টরাজ। তাঁর সঙ্গে বছর খানেক আগে প্রেম করে বিয়ে হয় জোতগ্রামের রাহুল মিশ্রের। তাঁদের একটি মাস দেড়েকের ছেলে আছে। রাহুলের চালের ব্যবসা। অন্যদিকে বিয়ের আগে থেকেই ব্রততী নার্সিংয়ের চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সম্প্রতি প্যানেলে নাম ওঠে ব্রততীর। অভিযোগ, স্ত্রীর নার্সিংয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আপত্তি তোলেন রাহুল। কিছুতেই তিনি স্ত্রীকে চাকরি করতে দিতে চান না। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে মতবিরোধও চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে ব্রততীর বাপের বাড়ির সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। ব্রততীর মা জানান, মেয়ে কয়েকবার এলেও জামাই আসেননি। ব্রততীর মা চম্পা চট্টরাজ বলেন, “আমার মেয়েকে চাকরি করতে দেবে না জামাই। বলছে, নার্সিং চাকরি করতে দেব না। বাড়িতে থাকবে। মেয়ের বক্তব্য ও চাকরি করবেই। এ নিয়ে মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে। মেয়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এখন মেয়ে বলছে ওর সঙ্গে ঘর করবে না। থানাতেও আমরা সবটা জানিয়েছি।” ব্রততীর মায়ের বক্তব্য, তাঁর স্বামী মাঠে কাজ করেন। যৎসামান্য রোজগার। তারপরও মেয়েকে নার্সিংয়ের জন্য পড়িয়েছেন। বর্ধমান মেডিকেল থেকে নার্সিং ট্রেনিং করেন ব্রততী। বিয়ে, বাচ্চা তারপরও হাল ছাড়েননি। দিন ১৫ আগে চাকরির চিঠি আসতেই জামাই বেঁকে বসেন বলে অভিযোগ। সরকারি চাকরি করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ব্রততীর পরিবারের।
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে রাহুলের পরিবার। রাহুল মিশ্রের দিদি শ্রাবণী মিশ্র বলেন, “আমার ভাইকে ফাঁসানো হয়েছে। ভাইয়ের চালের দোকান। এদিকে ভাইয়ের বউ নার্সিংয়ের চাকরির প্যানেলে নাম উঠেছে। তবে ব্রততীর বাড়ির লোক একেবারেই ভুল অভিযোগ করছে। ব্রততী সবসময়ই বলত চাকরি পেলে এ বাড়ি থেকে চলে যাবে। ও সবসময় ভাইকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার জন্য বলত। ভাই সেটা চাইত না। ভাই মাকে ছেড়ে যেতে চাইত না।” তাঁর দাবি, সবসময়ই শ্বশুরবাড়ি থেকে সাপোর্ট পেয়েছেন ব্রততী। এমনকী স্বামী ও শাশুড়িই তাঁকে কলকাতায় ইন্টারভিউ দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।