পূর্ব বর্ধমান: বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম। বীরভূমের গোটা জেলার পাশাপাশি এই তিন এলাকার দায়িত্বেও অনুব্রত মণ্ডলই। এখানকার সাংগঠনিক সবকিছুতেই শেষ কথা ‘কেষ্ট’। সেই ‘দাদা’ এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে। গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রতর গ্রেফতারির পর দলের নীচুতলার কর্মীরা যাতে কোনওভাবেই মনোবল না হারান, তারই দাওয়াই দিতে এবার ময়দানে জেলার নেতাদের কেউ কেউ। শুক্রবার যেমন আউশগ্রাম-২ ব্লকের তৃণমূল নেতা অরূপ মিদ্যাকে দেখা গেল রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে বলতে, ‘একজন অনুব্রতকে আটকালে লক্ষ লক্ষ অনুব্রত এলাকা কাঁপাবেন’। বিরোধীদের রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায় এই নেতাকে। যা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
এদিন রাজ্যজুড়ে যুব তৃণমূল মিছিল করেছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, অন্যদিকে ইডি-সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতার দাবিতে এই মিছিল। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে এদিন একটি বিক্ষোভ সভাও করা হয়। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে অরূপ মিদ্যা বলেন, “গতকাল কলকাতায় ছিলাম, খবর পাচ্ছিলাম ভালকিতে নাকি মিনি মার্কেটে বাজি ফাটানো হচ্ছে। সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এসব চলছিল। আমি পুলিশকে বলে দিয়েছি সরকারটা এখনও তৃণমূল কংগ্রেসের। আমি যদি আমার ছেলেদের বলে দিই ওদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিজেপি যে ক’টা করছে ওখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের নেতারা আমাদের বলেছেন, শান্ত থাকতে। আমরা শান্ত থাকব।”
অরূপ মিদ্যার সংযোজন, “আমাদের নেতাকে মিথ্যা মামলায় ধরে ওরা মনে করছে আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, বীরভূমে সংগঠনকে ওরা শেষ করে দেবে। এত সোজা? উনি (অনুব্রত) যে বীজ বপন করেছেন, আমাদের প্রতিটি নেতা এখন নিজেরা অনুব্রত মণ্ডল তৈরি হয়ে আছে। আমাদের ভয়ের কিছু নেই। একটা অনুব্রত মণ্ডলকে যদি জেলে আটকান, লাখ লাখ অনুব্রত মণ্ডল এই গোটা এলাকা কাঁপিয়ে দেবে। আমরা ভয়ের পাত্র নই, ভয় করি না। জীবনের বাজি রেখে এসেছি। ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখে দিয়েছে, বিজেপির বড় বড় কথা। সিবিআই, ইডি করে বেড়াচ্ছে। কাল বোলপুরে যে খেলা খেলেছে গোটা ভারতবর্ষের বুকে তা কলঙ্ক। একটা অসুস্থ লোককে ধরতে এত এত গাড়ি। এ তো গণতন্ত্রের লজ্জা।”
এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “তৃণমূল যে একটা তোলাবাজ, দুষ্কৃতীর দল আমরা বারবারই তা বলি। এই যে তৃণমূল নেতা যা বলছেন, তাতে তো আমাদের বক্তব্যকে স্বীকৃতি দেওয়াই হল। খুঁজে পাওয়া যাবে না বলতে কী বোঝাতে চাইছেন? মেরে ফেলবেন? ভোটের পর যা যা হয়েছে, সকলে জানেন। অনুব্রত মণ্ডল বা অরূপ মিদ্যাদের মতো তাঁর শিষ্যরা যা যা করেছেন, মানুষ দেখেছেন।”
উল্লেখ্য, অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করা হলেও তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে দুর্নীতি ও অন্য়ায় থেকে দূরে থাকবে দল। কার্যত যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, সে কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরও অরূপ মিদ্যাদের মতো দলের নেতাদের এই ধরনের মন্তব্য সেই অবস্থানের পরিপন্থী বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: 19,867.8 MHz স্পেকট্রাম অধিগ্রহণ করে ভারতীয়দের জন্য 5G বিপ্লব ঘটাতে চলেছে এয়ারটেল