পূর্ব মেদিনীপুর: ‘ভুল করেছি’, বনদফতরের মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে ‘অভব্য’ আচরণের ২৪ ঘণ্টা পর সুর নরম হল কারামন্ত্রী অখিল গিরির। সাংবাদিকদের সামনে তিনি স্বীকার করলেন, “আমি একটু রাগান্বীত হয়ে যে কথা বলে ফেলেছি, যে আচরণ করে ফেলেছি, সেটা ঠিক নয়। সেই কথাটা বলা অনুচিত। এক জন আধিকারিককে যে কথা বলেছি, সেটা নিশ্চিত ভাবে আমার বলা ঠিক হয়নি।”
তবে তাঁর এহেন আচরণের পিছনে অন্য তত্ত্ব খাঁড়া করেছেন তিনি। অখিলের বক্তব্য, ওই মহিলা পদাধিকারীর আচরণ খারাপ ছিল। সে সময়ে তিনি পরিস্থিতি সামাল না দিলে গ্রামবাসীরাই নাকি চড়াও হতেন। পরিস্থিতি সামাল দিতেই নাকি তাঁর এহেন আচরণ। তাঁর কথায়, “সে সময়ে যদি বিষয়টা আমি হাতে না নিতাম, তাহলে গ্রামে অন্য পরিস্থিতি তৈরি হত। একেবারে তিন চারশো লোক ঝাঁপিয়ে পড়ত।”
কারামন্ত্রী প্রথম থেকেই বন দফতরের একাধিক দুর্নীতি ফাঁস করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন। কিন্তু এবার সরাসরি সংশ্লিষ্ট মহিলা আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই বলেন, “ওঁর কথাবার্তাটা ঠিক নয়। বর্তমান যে রেঞ্জার, এখন কন্ট্রাক্টে আছেন, তাঁদের জেলা প্রশাসনেরও কেউ পছন্দ করেন না। ওঁ পরিস্থিতিটা জটিল করেছেন। আমাদের কিছু না। হয়তো আমার ওভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি। দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসাবে আমার হয়তো ওই কথা বলা ঠিক হয়নি, পরে বুঝতে পেরেছি। নিজেই দুঃখ পেয়েছি। পুলিশ প্রশাসনও তাঁকে বোঝাবার চেষ্টা করছিল, কিন্তু ওই রেঞ্জার শোনেননি।”
প্রসঙ্গত, তাজপুরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ নিয়ে যে পর্বের সূচনা হয়েছিল, তাতে মহিলা বনদফতরের আধিকারিকের উদ্দেশে কারামন্ত্রী অখিলের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের জল বহুদূর গড়িয়েছে। উচ্ছেদ রুখতে মহিলা পদাধিকারীকে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন অখিল। অখিলকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনার আয়ু ৭-৮ দিন, ১০ দিন!’’ তাঁকে জানোয়ার, বেয়াদব বলতেও শোনা যায় তাঁকে। তা নিয়ে চরম বিতর্ক ছড়ায়।
অখিলের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দল যে তাঁর পাশে নেই, তা আগেই স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। শনিবারই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “অখিল যেভাবে কথা বলছেন, তা কোনও অবস্থাতেই দল অনুমোদন করে না, শরীরি, মুখের ভাষা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি।” বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও যে অত্যন্ত বিরক্ত, তাতে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু শনিবার পর্যন্তও অখিল যে বক্তব্য সামনে রেখেছেন, তাতে অনুতাপের লেশ মাত্র ছিল না। পাল্টা বন দফতরের দুর্নীতি ফাঁসের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, এই পরিস্থিতিতে কি অখিল চাপের মুখে পড়েই ‘ভুল স্বীকার’ করলেন? তবে এটাও বিষয়, এখনও পর্যন্ত অখিলের বিরুদ্ধে দলের তরফে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।