তমলুক: একসময় গোটা এলাকাই অধিকারী গড় বলে পরিচিত ছিল। শিশির থেকে শুভেন্দু ‘শান্তিকুঞ্জ’-এর এক বিশেষ প্রভাব ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে। তবে, যে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় নন্দীগ্রামে গিয়ে ঘোষণা করলেন যে তিনি ভোটে লড়বেন ওই কেন্দ্র থেকে, সে দিন থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে ওই জেলা। নন্দীগ্রামের প্রেস্টিজ ফাইটে শেষ হাসি হেসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীই। আর তারপর থেকে তৃণমূলের সংগঠনে বারবার রদবদল তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সোমবার তৃণমূলের যে সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে, তাতে তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে সৌমেন মহাপাত্রকে আর নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের নেতা পীযুষ ভুঁইয়াকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেলার সংগঠন সামলাতেন শিশির অধিকারী ও বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়ার পর সেই সাংগঠনিক পদে বদল আনা হয়। শিশির আধিকারীর জায়গায় সৌমেন মহাপাত্র হন সভাপতি। আর চেয়ারম্যান করা হয় অখিল গিরিকে। এরপর তৃণমূল সাংগঠনিক জেলা দু ভাগে ভাগ করে দেয়, কাঁথি ও তমলুক।
এরপর তমলুক জেলায় তৃণমূলের সভাপতি হন দেবপ্রসাদ মণ্ডল ও চেয়ারম্যান হন বিপ্লব রায় চৌধুরী। কিছুদিন পরই আবার রদবদল। দেবপ্রসাদের জায়গায় সভাপতি হন তুষার মণ্ডল আর বিপ্লবের পরিবর্তে চেয়ারম্যান হন সৌমেন মহাপাত্র। আবারও বদল। সোমবার প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, চেয়ারম্য়ানের জায়গায় সভাপতি করা হল সৌমেন মহাপাত্রকে আর নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের নেতা পীযূষ ভুঁইয়া হলেন দলের চেয়ারম্যান।
তমলুক সাংগঠনিক জেলার পদে কেন বারবার বদল ঘটানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেই। জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, অধিকারী পরিবারের ক্যারিশ্মাকে টেক্কা দেওয়ার জন্যই বারবার রদবদল ঘটানো হচ্ছে। কার্যত ১৬ মাসে এই নিয়ে চার বার সাংগঠনিক রদবদল হল তমলুকে। কেউ কেউ বলছেন, শুভেচ্ছার ফুল শুকোতে না শুকোতেই আবার বদল।
এই প্রসঙ্গে, তমলুক সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘দল আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। এ জন্য নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘দল দায়িত্ব দিয়েছে। চেষ্টা করব যথাসাধ্য পালন করার। চেষ্টা করব সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমার ওপর আস্থা রেখেছে দল, তার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু বার বার কেন বদল সাংগঠনিক স্তরে? তা নিয়ে কিছুই বলার নেই আমার।’
অন্যদিকে, বিজেপির জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, লুঠের ভাগ ও বকরা নিয়ে সমস্যা বলেই বার বার পরিবর্তন করা হচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী কাউকে বিশ্বাস করেন না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, কালীঘাটের সঙ্গে সঠিক যোগাযোগ হচ্ছে না। নতুন লোক এলে নতুন ভাবে তোলা তুলবে, তাই এই বদল।