পূর্ব মেদিনীপুর: বাবার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেখিয়েই চাকরি পেয়েছেন ছেলে। সব অনুমোদন পেয়ে গিয়েছেন। নিয়ম-কানুন সব মিটিয়ে রীতিমতো ট্রেনিংও শুরু করে দিয়েছেন ‘ছেলে’। কিন্তু সেই খবর কানে যেতেই চমকে উঠলেন ৭৯ বছরের বৃদ্ধ। তিনি তো দিব্য বেঁচে আছেন। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে চলছে সংসার। এরই মধ্যে তাঁর মৃত্যু সংবাদ দিল কে? খোঁজ খবর নিতেই চোখ কপালে। তাঁরই ছেলে পরিচয় দিয়ে চাকরি করছেন কোনও এক যুবক, যাঁর সঙ্গে তাঁর কস্মিনকালেও কোনও সম্পর্ক ছিল না। এনভিএফ নিয়োগে এ ভাবেই জালিয়াতির অভিযোগ উঠল পূর্ব মেদিনীপুরে।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানার টিকারামপুর এলাকার বাসিন্দা ডালিম কুমার মণ্ডল এই অভিযোগ সামনে এনেছেন। ৭৯ বছরের ওই বৃদ্ধ সম্প্রতি ঘটনার কথা জানতে পারেন। অভিযোগ, তাঁর ছেলে হিসেবে দাবি করে তাঁরই ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দাখিল করে অতি সম্প্রতি এনভিএফের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন মেদিনীপুরের অতনু মণ্ডল। জানা গিয়েছে, নথি দাখিল করে সমস্ত নিয়ম মেনে ‘ডাই ইন হারনেস’ গ্রাউন্ডে রাজ্য সরকারের অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের অন্তর্গত এনভিএফের চাকরিতে যোগ দেন অতনু। ১৪ জুন থেকে নদিয়ায় এনভিএফের সদর দফতরে তাঁর বিভাগীয় ট্রেনিংও শুরু হয়েছে।
মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ডালিম কুমার মণ্ডল। বৃদ্ধের পরিবারে রয়েছেন তাঁর ছেলে অনুপ কুমার মণ্ডল, স্ত্রী, বউমা ও দুই নাতনি। ঘটনায় রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড় মণ্ডল পরিবারের সদস্যদের। ডালিম কুমারের দাবি, কস্মিনকালেও মেদিনীপুর শহরে ছিলেন না তিনি। অতনু মণ্ডল নামে তাঁর কোনেও ছেলেও নেই। তিনি এও জানিয়েছেন, একাধিকবার তিনি তাঁর ছেলের চাকরির জন্য জেলা প্রশাসন ও এনভিএফ দফতরের কর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। বারবারই শূন্য হাতে ফেরানো হয়েছে তাঁকে। অবসরকালীন সুবিধা পাওয়ার জন্যও তিনি বার বার দ্বারস্থ হয়েছেন।
সম্পূর্ণ ‘ভুয়ো’ নিয়োগ করে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলেই অভিযোগ। গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে মণ্ডল পরিবার।
উল্লেখ্য, একসময় নন্দকুমার থানার অধীনে রাজ্য সরকারের ন্যাশনাল ভলেন্টিয়ার ফোর্সে (এনভিএফ) কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর রেজিমেন্টাল নম্বর ছিল ০৬২৬৫৩। ১৯৯৯ সালে ৫৫বছর পূর্ণ করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে অবসর নেন তিনি। এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত অতনু মণ্ডল বা তাঁর পরিবারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর চরম অস্বস্তিতে মেদিনীপুর এনভিএফের কোম্পানি কমান্ডার অফিসের কর্তারা। জেলার কোম্পানি কমান্ডার কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জানান, কোনেও ব্যক্তির নিয়োগের আগে তাঁর ভেরিফিকেশনের সমস্ত দায়িত্ব থাকে পুলিশের ডিআইবি বিভাগের ওপর। তবে পুরো বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।