পূর্ব মেদিনীপুর: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ইতিহাসে মেদিনীপুরের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম শহিদ হিসেবে লেখা হয়েছিল পুরিমাধব প্রামাণিকের নাম। তিনি কল্যাণচক গৌর মোহন ইনস্টিটিউশনের সপ্তম শ্রেণিতে পাঠরত ছিলেন। কিন্তু তারপরও ইতিহাসে জায়গা হয়নি তাঁদের। আক্ষেপ পূর্ব মেদিনীপুরবাসীর।
মেদিনীপুরের অসাধারণ স্বাধীনতা সংগ্রাম ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তবু ভাসমান হিমশৈলের কতটুকুই বা চোখে পড়ে? স্বাধীনতা সংগ্রামের অনিশ্চিত দিনে যে কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নাম তুলে ধরেছিল। একদা মহিষাদল অধুনা নন্দকুমার থানার কল্যাণচক গৌর মোহন ইনস্টিটিউশন নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে অন্যতম।
অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে স্কুল কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল অনেক দামাল যুবক, নাবালকরা। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল অসম থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ। গ্রামের পর গ্রাম কোথাও হয়েছে ব্যাপক তল্লাশি, কোথাও আবার অকথ্য নির্যাতন কোথাও বা লুটতরাজ ধর্ষণ। এক কথায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার প্রতিহিংসা পরায়ণ শাসন যন্ত্র উঠেছিল।
১৯৪২ এর ২৯ সেপ্টেম্বর। কংগ্রেসীদের থানা দখল অভিযানে যখন গোটা জেলা অধীর উন্মত্ত, তমলুক শহরে সবচেয়ে বিখ্যাত মিছিলে এগিয়ে চলেছিলেন ৭৩ বছরের মাতঙ্গিনী হাজরা। তিনি আত্মহুতি দিলেন তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন এই স্কুলের দুই নাবালক। ক্লাস সেভেনের পুরিমাধব প্রামাণিক, এবং ক্লাস নাইনের উপেন্দ্রনাথ জানা। সে দিনের অবিস্মরণীয় শহিদ তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল দুই কিশোরের নাম। একই দিনে মহিষাদল থানার সামনেও প্রাণ দিলেন ওই স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্র আশুতোষ কুইলা।
মহিষাদল রাজ কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ হরিপদ মাইতি জানান, ‘স্কুলগুলি সরকারি অত্যাচারের ভয়ে তাদের ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্যে অনুপ্রাণিত করতে পারেননি। সেই স্থানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক শ্রীপতি চরণ বয়াল এই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি সরাসরি স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন।’
উল্লেখ্য পুরীমাধব প্রামাণিক। মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে কনিষ্ঠতম শহীদ হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন। শুধু তাই নয় একই দিনে তিন নাবালকের আত্ম বলিদানে এই প্রতিষ্ঠানের নাম অমর করে রাখবে চিরকাল। কিন্তু জেলার পরিধি পেরিয়ে আজও এই ছাত্ররা ছাত্রদের আইকন বা পাঠ্য পুস্তকে জায়গা পায়নি আক্ষেপ তো থাকেই জেলাবাসীর। ভারতবর্ষ এগিয়েছে কিন্তু এই ছোট ছাত্র স্বাধীনতা সংগামীদের কথা আজ আর কেউ মনে রাখেনি।