পূর্ব মেদিনীপুর: জেলার প্রাচীন মেলা ময়নাগড়ের রাস। ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্য মেলবন্ধন । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ও লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ময়নাগড়ের রাসযাত্রা এ বছর ৪৬৩ বর্ষে পদার্পণ করল। এই রাসমেলা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম মেলা। এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ কার্তিক পূর্ণিমার মধ্যরাতে রাজপরিবারের কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউকে নিয়ে নৌকা যাত্রা। যা হাজার হাজার মানুষ ওই দিন রাসযাত্রা দর্শন করেন। ময়নার রাসমেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন মেদিনীপুরের মানুষ।
কালীদহ ও মাকড়দহ দিয়ে ঘেরা ময়না গড়ের রাজপরিবারের গোবর্ধন বাহুবলীন্দ্র ১৫৬১ সালে কালীদহের তীরে কুলদেবতা শ্যামসুন্দর জিউ মন্দিরে প্রথম রাসমেলা শুরু করেন বলেই জানা গিয়েছে। সেই থেকে বাহুবলীন্দ্র পরিবারের উদ্যোগে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ১৯৭০ সাল থেকে স্থানীয় মেলা কমিটির উদ্যোগে মেলা হয়ে আসছে।
২০১২ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে গঠিত হয় ময়না রাস মেলা কমিটি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তথা পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাচীন মেলা। রাস উৎসবে পরম্পরা ধর্মীয় আচার অনুযায়ী ১৭ শুক্লপক্ষের উত্থান একাদশীর তারিখ থেকে পরপর আট দিন শ্রী শ্রী শ্যাম সুন্দর জিউ রাজবাড়ির মূল মন্দির থেকে নৌকা বিহারে কালীদহের ৫০০ মিটার লাবণ্যময় জল পরিক্রমণ করে ময়না রাস মন্দিরে প্রবেশ করবে।
কেবল মাত্র পূর্ণিমার দিন সন্ধ্যা ছ’টার সময় রাজবাড়ির কুল দেবতা শ্যাম সুন্দর জিউ ফিরে যাবেন মূল মন্দিরে। শেষ রাস যাত্রা ১ ডিসেম্বর শুক্রবার থেকে বিকেলে ঢাক ঢোল কীর্তন, আতসবাজি, বাতাসা লুঠ সহযোগে রাস মন্দির থেকে নৌকা বিহারে রাজবাড়ি মূল মন্দিরে প্রত্যাবর্তন হবে। ঠাকুরের নৌকা বিহার বন্ধ হলেও মেলা চলবে আরও এক সপ্তাহ।
বিশেষ আকর্ষণ ময়নার রাস মেলার হল। থালার মত বড় বড় বাতাসা ও ফুটবলের মতো কদমা মিষ্টি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন ও বৃহত্তম রাস মেলা শুধু ময়নাবাসী নয়, জেলার অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পশ্চিম মেদিনীপুরের লোকেরাও সারা বছরের এইকটা দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন মেলা ময়নাগড়ের রাস মেলার চলছে তারই প্রস্তুতি।