পূর্ব মেদিনীপুর: দলের কর্মীদের কাছেই তোলাবাজির শিকার নেতা? চাঁদার নামে তোলা চেয়ে হুমকি ফোন। এবার প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে হুমকি। ফোনের ভাইরাল অডিয়ো ঘিরে চাঞ্চল্য নন্দীগ্রাম-সহ জেলায়। যদিও ভাইরাল অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি TV 9 বাংলা। সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারী দলে না থাকায় মিলছে না চাঁদা। এই অভিযোগে তৃণমূলে জেলা সভাপতির কাছে চাঁদার নামে তোলা চেয়ে তিরস্কৃত হয় নন্দীগ্রামের এক উৎসব কমিটির সদস্যরা। ভাইরাল অডিয়োতে পরিস্কার দু’তরফের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। পাল্টা জবাবে সৌমেন মহাপাত্রকে দেখা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় উৎসব কমিটির তরফে।
কমিটির সদস্যরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি। বিষয়টিতে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পাল। নন্দীগ্রামের ভূতামোড় শান্তি স্পোর্টিং ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের মধ্যে হওয়া টেলিফোনিক বাক্যালাপের রেকর্ড ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভাইরাল হওয়া ওই অডিয়ো রেকর্ড শুনে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে ,নন্দীগ্রাম ভূতারমোড় শান্তি স্পোর্টিং ক্লাব ওই সদস্যরা তৃণমূলের একেবারে সক্রিয় কর্মী। তাই উৎসবে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে চাঁদার দাবিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা সভাপতি অনুষ্ঠানে যেমন যাননি, তেমনি চাঁদাও দেননি। এদিকে উৎসব চললেও টান পড়েছে ভাঁড়ারে। তাই খানিকটা বাধ্য হয়ে এবং অনেকটা আশা নিয়ে দলের জেলা সভাপতিকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে ফোন করেছিলেন ওই ক্লাব সদস্যরা। তৃণমূলে যখন ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী,তখন প্রায় ৫০-৬০ হাজার দিতেন। কিন্তু এবার দল থেকে কোনও সাহায্যই মিলল না। এমনই আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে ওই কর্মীকে। আর এ কথা শোনা মাত্রই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সৌমেন মহাপাত্র।
প্রথম ক্লাব সদস্য: হ্যালো
সৌমেন: হ্যাঁ
প্রথম ক্লাব সদস্য: স্যর বলছেন তো?
সৌমেন: কে বলছেন?
প্রথম ক্লাব সদস্য: আমরা নন্দীগ্রাম ভূতামোড় সাথী উৎসব থেকে বলছি।
সৌমেন: বলুন।
প্রথম ক্লাব সদস্য: স্যর, আপনাকে ইনভাইট করেছিলাম এবং আপনাকে এখানে প্রধান অতিথি ও উপদেষ্টা হিসেবে রেখেছিলাম। আপনি আমাদের সময় দিলেন না। আসেননি।কিন্তু আমরা আপনাকে আর্থিক সহযোগিতার কথা বলেছিলাম। একটাই কারণ ছিল আমরা সবাই তৃণমূল দলের সক্রিয় কর্মী।একেবারে সক্রিয় কর্মী। সে জায়গায় আমরা এখনও পর্যন্ত টাকা পাইনি। এখনও পর্যন্ত চলছে আমাদের উৎসব।কিন্তু আমরা দেনায় পড়ে গেছি। আপনাদের একটা সাহায্য পাওয়ার আশায় ছিলাম। যে জায়গায় আমাদের শুভেন্দু অধিকারী প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা দিত। সেখানে দল থেকে আমরা ১ টাকাও পাইনি।
সৌমেন: (উত্তেজিত হয়ে) তোমরা এক কাজ কর, শুভেন্দু অধিকারীর দলে চলে যাও।
প্রথম ক্লাব সদস্য: (হুমকি দিয়ে) আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। ভূতামোড় কী করতে পারে সেটা দেখানো হবে।
সৌমেন: ( আরও উত্তেজিত হয়ে) এই গরম দেখিও না। গরম দেখিও না।
প্রথম ক্লাব সদস্য: (আক্ষেপের সুরে) আপনি প্রাক্তন মন্ত্রী। জেলা নেতৃত্ব। আপনি এটা বললেন!
সৌমেন: ( আরও কিছুটা উত্তেজিত হয়ে) গরম দেখিও না। আমি চুরি করিনি। আমি চুরি করিনি।
প্রথম ক্লাব সদস্য: আপনি একজন জেলা নেতৃত্ব!
সৌমেন: ( উঁচু গলায়) আমায় দেখাবে? গরম দেখাচ্ছো। ভূতামোড় কী করবে?
দ্বিতীয় ক্লাব সদস্য: ভূতামোড় করছে বলেই তো আপনারা চেয়ারে বসে আছেন!
সৌমেন: এই সব কথা বল না। আমি তোমাদের ভোটে চেয়ারে বসিনি।আমার পাশে থাকতে হবে না।তুমি ওখানে দায়িত্বে কুণালবাবু আছেন, ওঁর সঙ্গে কথা বল। আমার চুরি করা টাকা নেই তোমাদের দেব।
দ্বিতীয় ক্লাব সদস্য: স্যর, শুনুন, আমরা বিতর্ক করছি না। ছেলেদের একটা ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতে পারে।
সৌমেন: না না বিতর্ক নয়, অনেক বাজে কথা বলছে।
দ্বিতীয় ক্লাব সদস্য: বলছি, শুনুন, স্যর
সৌমেন: তোমায় বলতে হবে না। ওখানে সভাপতি আছেন, ওখানে দায়িত্বে কুণালবাবু আছে তাঁর সঙ্গে কথা বলবে।
যদিও এই বিষয়ে তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, “শুভেন্দুবাবু জননেতা, তাই রাজনীতির উর্ধে উঠে বিধায়ক কার্যালয় খুলেছেন সকলের জন্য। উদ্যোক্তাদের টাকা দেওয়া নয়, সাহায্য করে পাশে থাকার বার্তা দেন শুভেন্দুবাবু। যাতে ওই উৎসব আরও বিকশিত হয়। আর তৃণমূলের তো টাকা দিয়ে সব রাজনীতি, সৌমেন বাবুর এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু ছিল না, ঠান্ডা মাথায় ওঁদের তো পাশে থাকতে পারতেন।”
বিষয়টিতে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পাল। তিনি বলেন, “এসব ক্লাবগুলিকে সরকার যেভাবে মদ খাওয়া ও বক্স বাজানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছে, তা সৌমেনবাবুই বলে ফেলেছে। ” প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “যে বা যারা এসব করেছে, তারা তাদের প্রয়োজনমতো মন্তব্য করেছে। আমি কোনও শিল্পপতিও নই, কিংবা বিত্তশালী মানুষ নয়। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে ঠিকই। খোঁজ নিয়ে দেখতে বলেছি স্থানীয় নেতৃত্বকে।” স্থানীয় নেতা বলেন, “তমলুক সাংগঠনিক জেলার সৌমেন মহাপাত্র এমন একজন রাজনৈতিক ব্যত্তিত্ব, যাঁর সঙ্গে দুর্নীতি শব্দটা যায় না। “