পূর্ব মেদিনীপুর: শান্তিকুঞ্জের উপর ড্রোন ওড়ানোর অভিযোগ উঠল। শুভেন্দু অধিকারীদের কাঁথির বাড়ি শান্তিকুঞ্জ। সেই বাড়ির উপর ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ড্রোন ওড়াচ্ছে বলে দাবি করেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। দিব্যেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “কাঁথি কলেজ, আমার বাড়ির উপর ড্রোন ওড়ানো হচ্ছে। আমি অধ্যক্ষ মহাশয়কে ফোন করছি। উনি আমাকে খোঁজ নিয়ে বলেন পুলিশ ড্রোন ওড়াচ্ছে। আমি প্রার্থনা করব মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে, আমার পরিবার, আমার বাড়িকে এ ধরনের পরিবেশ থেকে যেন শান্তি দেন।”
দিব্যেন্দু অধিকারীর কথায়, “শুক্রবার সকালে আমি আমার বাড়ির বারান্দায় বসে আছি। দেখলাম ড্রোন ওড়ানো হচ্ছে। বিস্মিত হলাম। খবর নিলাম। ইউনিফর্ম নেই, আইকার্ড নেই, কিছু লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ধরনের নিম্নরুচির পরিচয় এই থানা করছে। কার নির্দেশে করছে আমি জানি না। আমি এখনও বলছি আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমার সংসদীয় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমার দলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর প্রতিও আমি শ্রদ্ধাশীল।” দিব্যেন্দুর দাবি, পুলিশের কাছ থেকে কোনওরকম সহযোগিতা তাঁরা পান না। এ প্রসঙ্গে তমলুকের সাংসদের বক্তব্য, “পুলিশ কোনওরকম অভিযোগই নিতে চায় না। আমি বলেছি আমার বাবার বয়স ৮৪ বছর। আমার মায়ের বয়স ৭৯। আমার একটা ৯ বছরের মেয়ে আছে। বাড়ির একটা সুস্থ পরিবেশ থাকা দরকার।
প্রসঙ্গত, এর আগে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তুলেছিলেন শান্তকুঞ্জের বাইরে তৃণমূলের বাইকবাহিনী বারবার টহল দেয়। সেই ঘটনার পর রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রদফতরকে বিষয়টি জানান। কাঁথি থানাকে বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। গত ১৮ই ডিসেম্বর বিকেলে সাড়ে ৪টে নাগাদ কাঁথি থানার পুলিশ অধিকারী বাড়ির সামনে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ক্যামেরার দিক নির্দেশ ছিল শান্তিকুঞ্জের মূল ফটক বলেও অভিযোগ করেন অধিকারীরা।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন। তার বাড়ির নিরাপত্তা কেন প্রশ্নের মুখে পড়ছে তা জানতে চেয়ে আদালতে যান শুভেন্দু অধিকারী। একইসঙ্গে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা পাওয়া নিয়েও সরব হন। কিন্তু এই শান্তিকুঞ্জের নিরাপত্তা নিয়ে তরজা যেন থামছেই না। এ প্রসঙ্গে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেন, “কারও পরিবারের কোনও ক্ষতি হোক আমরা চাই না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাড়ির এলাকা নাকি এলাকা জুড়ে বাড়ি কোনটা সুনিশ্চিত করবেন তা জানতে হবে তো। দিন দিন ওনার বাড়ির এলাকা বেড়েই চলেছে। উনি জননেতা বলে দাবি করেন, অথচ ৩০ জন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ওনার। এর আগেই তো পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যে বিরোধী দলনেতা থেকেছেন। কোথায় ওনাদের তো এত নিরাপত্তা অভাব হয়নি।”
এই বিষয়ে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক অসীম মিশ্র বলেন, “রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতার জনপ্রিয়তা নিয়ে ভয় পেয়েছে শাসকদল। তাই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ওনাকে পুলিশ বা শাসকদল আটকাচ্ছে। রাজ্যে আইনের শাসন নেই বলেই বার বার সব বিষয়ে ছুটে যেতে হচ্ছে মহামান্য হাইকোর্টে। শুভেন্দুবাবু বিরোধী দলনেতা। ওনার বাড়ির সামনে কটুক্তি ভরা গান চালালে, পুলিশকে দিয়ে সিসিটিভি লাগানো-সহ একাধিক পন্থায় মানসিক হেনস্থা করা হচ্ছে।” যদিও ড্রোন ওড়ানোর প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) মানব সিংহল বলেন, “পুলিশ ড্রোন ওড়াচ্ছে এমন কোনও খবর নেই। যদি বিষয়টি সত্যি হয়, আমরা তদন্ত করে দেখব এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করব।”
আরও পড়ুন: RG Kar Medical: আরজি কর মেডিকেলে নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব! লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হচ্ছে