পূর্ব মেদিনীপুর: বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে ফোটোফিনিশ জয় পেয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী রাজ্যের প্রধান মুখ তিনি। তিনি শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। কিন্তু নন্দীগ্রামে জয় পেয়েও ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। সে মামলার চূড়ান্ত রায় এখনও বিচারাধীন। নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাই সরাসরি এ বার রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকেই নিশানা করলেন রাজ্যর সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র (Soumen Mahapatra)।
সৌমেনের কটাক্ষ
মঙ্গলবার, তৃণমূলের দলীয় সভামঞ্চ থেকে সৌমেন নাম না করে শুভেন্দুকে কটাক্ষ হেনে বলেন, “আপনাকে আমি বিধায়ক হিসেবে মানি না। আপনি আলো নিভিয়ে, ধমকে-চমকে টাকা দিয়ে কীভাবে জিতেছেন তা তো সবাই জানে! আমি মনে করি এখনও এই জয় বিচারাধীন। আর ওঁ (শুভেন্দু অধিকারী) বিচারকে ভয় পেয়ে বিচারককেই সরানোর তালে রয়েছেন। একজন বিশ্বাসঘাতক মানুষ ওঁ।”
এখানেই শেষ নয়, সেচমন্ত্রীর আরও সংযোজন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দয়া করলে আপনার হয়ত ‘লালবাতি’ থাকবে, বিরোধী নেতার তকমাও জুটবে, নয়ত সবটাই যাবে। আপনি বিভেদের রাজনীতির চেষ্টা করছেন। আরও পুরসভার নির্বাচন রয়েছে। সবেতেই জয়লাভ করবে তৃণমূল। ঘাসফুল নির্মূল হবে। ভারতবর্ষের নেতা হওয়া আর আপনার হবে না।”
যদিও সৌমেনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও শুভেন্দু অধিকারীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি পদ্ম শিবিরেরও। তবে সৌমেন-শুভেন্দু সংঘাত নতুন নয়।
শুভেন্দু-সৌমেন সংঘাত
পূর্বে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী। তিনি দাবি করেছিলেন, শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, শুভেন্দুর তৃণমূলে ফেরা এখন সময়ের অপেক্ষা। এরপরই পাল্টা তাঁকে আক্রমণ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সৌমেনের বিরুদ্ধে শুভেন্দু কটাক্ষ হেনে বলেছিলেন, “সৌমেনবাবু প্রত্যেকদিন সুরা পান করেন। কথা বলার সময়েও করেছিলেন বলে আমার মনে হয়। এ ধরনের কথা বলা উচিৎ না, তবু দায়িত্ব নিয়ে বলছি। তমলুকে সবাই জানে। মানিকতলাতে একটা ওষুধের দোকানের পিছনে উনি কী করেন সন্ধ্যার পরে তা সকলেই জানেন। আমার মনে হয় কাল দিনের বেলাতেও অপ্রকৃতস্থ ছিলেন। তাই এ ধরনের কথা বলেছেন।”
শুভেন্দুর এ হেন মন্তব্যে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সৌমেন। পাল্টা বলেছিলেন, “শুভেন্দু অধিকারী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। তাঁর মুখে এ ধরনের কথা মানায় না। সংযত হোন। ওঁর ভাষাজ্ঞান সংযত হওয়া দরকার। রাজনীতির নিয়ম মেনেই আমি নন্দীগ্রামের সমাবেশে বক্তব্য রেখেছি। তাতে রুষ্ট হয়ে ওঁ একাধিক কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন। আমার মনে হয় সেসময়ে ওঁ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। রুচিহীন মন্তব্যই স্পষ্ট করে করে দেয় তাঁর ভাষার দৈন্যতা। শব্দ চয়নে যে তিনি উলঙ্গ হয়ে গিয়েছেন তা প্রমাণিত।”
এখানেই না থেমে সেচমন্ত্রী আরও সংযোজন করেন, “আমার বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করে ওঁ অনাস্বাদিত আনন্দ উপভোগ করুন, সেটা আমি চাই। তবে রাজনীতিতে থাকার জন্য যুক্তি-তর্কে থাকা উচিত। ওঁর মতো রাজনীতিকের থেকে সেটা আমি আশা করি।” ফের একবার নতুন করে সৌমেন শুভেন্দুর সংঘাতে জল কোনদিকে গড়ায় সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
বিতর্কের নন্দীগ্রাম
প্রসঙ্গত, ২ মে-র সন্ধ্যায়, সংবাদসংস্থা এএনআইয়ের তরফে জানা যায়, ওই কেন্দ্রে ১২০০ ভোটে জয়ী হয়ে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু সময় পরেই বিজেপির তরফে দাবি করা হয়, ১৭ রাউন্ডের চূড়ান্ত গণনা শেষে ১৬৫৩ ভোটে শুভেন্দু জয়ী হয়েছেন। সমস্ত বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠে স্থানীয় রিটার্নিং অফিসারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেনে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নন্দীগ্রামে জয়ী শুভেন্দুই। পরাজিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরবর্তীতে, তৃণমূল সুপ্রিমো জানান, তিনি নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মাথা পেতে নিয়েছেন। তবে তাঁর অনুমান গণনায় কারচুপি হয়েছে। প্রয়োজনে, সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যাবেন তিনি। সেই জল সত্যিই গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। নন্দীগ্রামের ফল-বিতর্ক মামলার চূড়ান্ত রায় এখনও প্রকাশিত হয়নি।