পূর্ব মেদিনীপুর: এ বছর আর বিদ্যার দেবীর আরাধনায় মাতল না পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের আলুয়াচক জুনিয়ার হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। সমস্ত বিদ্যালয়ে যখন আনন্দে মেতে উঠছে ঠিক তখন একেবারে ভিন্ন ছবি তমলুকের এই আলুয়াচক জুনিয়ার হাইস্কুলের। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুল। তবে বাগদেবীর আরাধনা করার মতো ছাত্রছাত্রী নেই এই বিদ্যালয়ে। শুনলে চমকে উঠতে হবে ছাত্রসংখ্যা!আলুয়াচক জুনিয়র হাইস্কুলের এবছর ছাত্রসংখ্যা দাঁড়িয়েছে সর্বমোট ১ জন। চমকে গেলেন তো! হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন ছাত্রসংখ্যা সর্বমোট ১জন। তারওপরও আছে। স্কুলে পড়াশোনা বা নিয়মকানন পাঠে বেশি জবরদস্তি করা যাবে না, এমনটাই শর্তে আসে ওই ছাত্র।
সপ্তাহে বড়জোর ২ থেকে ৩ দিন মেরেকেটে। তারওপর সাড়ে বারোটা বাজলেই ছেড়ে দিতে হবে। যেদিন ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রটি আসবে, সেদিনই মিড ডে মিলের রান্না বসে। আর ৩ জন শিক্ষক স্কুলে একপ্রকার হাজিরা দিতেই আসেন বলা যায়। যদিও শিক্ষকদের বক্তব্য, গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে স্কুলে ভর্তি করার জন্য অনুরোধ করা হলেও অবিভাবকরা কর্ণপাতই করেনি।
এলাকার ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা দূরবর্তীস্থানের হাইস্কুলেই ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষকরা স্কুলে এসে বসে থেকেই বাড়ি ফিরতে হয়। শিক্ষকদের দাবি, এভাবে বসে থাকা সম্ভব আর হচ্ছে না। তাঁদের অন্যত্র কোন বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হোক। পাশাপাশি রাস্তা ও মাঠের ধারে বিদ্যালয়টি হওয়ায় সূর্য ডুবলেই অসামামিক কাজকর্ম চলে বলেও অভিযোগ।
বিকেলের পরই মদ ও গাঁজার আসরও বসে বলে অভিযোগ। বিদ্যালয়ের সামনে পড়ে থাকে মদের বোতল। শিক্ষকদেরই প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হয়। সবমিলিয়ে রাজ্যের একটি ব্যতিক্রমী বিদ্যালয় বললে ভুল হবে না। যে ছাত্রটি পড়ে সে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের। তাই বাগদেবীর আরাধনা আর হয় না স্কুলে। শিক্ষকদের বক্তব্য ছাত্র যদি নাই থাকে কার জন্যই বা পুজো হবে। তবে স্কুলের এমন দুরবস্থা নিয়ে জেলা শিক্ষাদফতর তমলুকে এবং শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিডিওর কাছে যায় TV9 বাংলা। তাঁরা কোনও মন্তব্য করতেই রাজি হননি।
এবিষয়ে এলাকার বিজেপি নেতা বামদেব গুছাইত রাজ্য সরকারের এই শিক্ষা ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন। শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজেশ হাজরা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলের এই অবস্থা, আমরা জানি। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা আবেদন করেছি, ওই ছাত্রকে যাতে অন্য কোনও স্কুলে ভর্তি করানো হয়, শিক্ষকদেরও অন্য স্কুলে বদলি করানো হয়।”