পূর্ব মেদিনীপুর: সংসদের বাদল অধিবেশনে প্রতিদিনই শিরোনামে তৃণমূল (TMC)। তাদের সরকার-বিরোধী সুর এতটাই চড়া এবং মনোভাব এতটাই তীব্র যে, দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনকে গোটা অধিবেশন সাসপেন্ড করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অধিকারী বাড়ির ছেলে তথা তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী (Dibyendu Adhikari) কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। অবশেষে প্রকাশ্যে এলেন দিব্যেন্দু। তবে দিলেন চমক। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে কমরেড নির্মল জানার স্মরণ সভায় দেখা গেল তমলুকের সাংসদকে!
রবিবার জেলা কমিউনিস্ট পার্টির আয়োজনে কমরেড নির্মল জানার স্মরণ সভার অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। সেখানে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও। বাম নেতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিব্যেন্দু বলেন, ‘নির্মল বাবু অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন তাই তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এখানে উপস্থিত হয়েছি।’
রবিবার বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব কমরেড নির্মল জানা স্মরণ সভা উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই সভায় হঠাৎই উপস্থিত হন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। বামফ্রন্টের স্মরণসভায় দিব্যেন্দুর উপস্থিতি রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করলেও তা উড়িয়ে তমলুকের সাংসদ জানিয়ে দেন, সিপিএমের জেলা সভাপতি নিরঞ্জন সিহির ডাকে সাড়া দিয়ে প্রয়াত জেলা সম্পাদক নির্মল জানাকে শ্রদ্ধা জানাতেই তাঁর উপস্থিতি। আর এটা ‘সম্পূর্ণ সৌজন্যতামূলক উপস্থিতি’ বলে মন্তব্য তাঁর।
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন নির্মলবাবু। রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসায় পরে তাঁকে চণ্ডীপুর করোনা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সব চেষ্টা সত্ত্বেও গত ১৭ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৭০বছর। কমরেড নির্মল জানা দীর্ঘদিন ধরে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এবং রাজ্য কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে আসে কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের মনে।
যদিও এদিনের স্মরণসভায় উপস্থিত থাকা বিমান বসু, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য কমিটির সদস্য রবীন দেব, মিনতী ঘোষ, নিরঞ্জন সিহিদের মধ্যে আলাদা করে নজর কাড়েন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী।
উল্লেখ্য, সংসদে বাদল অধিবেশনে অনুপস্থিত শিশির অধিকারী এবং তাঁর পুত্র দিব্যেন্দু অধিকারী। কাঁথি এবং তমলুকের দুই তৃণমূল সাংসদ লোকসভার বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে দিল্লি যাননি। বিধানসভা ভোটের আগে দু’জনকে নিয়েই বিস্তর জল্পনা এবং আলোচনা হয়েছিল। প্রতিনিয়ত তাঁদের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়ছিল। এর মধ্যে শিশির অধিকারী অমিত শাহের সভামঞ্চে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন।
তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অবশ্য তেমনকিছু করেননি। তবে তিনি হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর একটি সরকারি কর্মসূচির মঞ্চে এলাকার সাংসদ হিসেবে হাজির ছিলেন। এদিকে শিশিরের বিরুদ্ধে যখন দলবিরোধী ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল শিবির, দিব্যেন্দুর বেলায় সক্রিয় দেখায়নি তাদের। এর মধ্যে তমলুকের সাংসদকে দেখা গেল বাম নেতার স্মরণসভায়। আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বহিরাগত’ বলে ভিডিয়ো বার্তা, কেএলও নেতা জীবন সিংহের বিরুদ্ধে UAPA ধারায় মামলা