কাঁথি : কয়েক মাস আগে জাতীয় সঙ্গীত ভুল গাওয়া নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রিনা দাসকে। এবার নিজের ওয়ার্ডে তোলাবাজির অভিযোগে নাম জড়াল ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কাঁথি পৌরসভার কাউন্সিলর ইনচার্জ রিনা দাসের বিরুদ্ধে। তারই প্রতিবাদে কাঁথি-দারুয়া রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। এই নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করলেন বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারী।
তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের অভিযোগ , রিনা দেবী স্বজনপোষণের রাজনীতি করছেন। এমনকি সরকারি প্রকল্পের বাড়ি তৈরি করার নাম করে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন কাউন্সিলর। আজ সন্ধ্যায় রিনা দাসের তৃণমূলের দলীয় পার্টি অফিসের সামনে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। ঘটনার খবর পেয়ে আসে কাঁথি থানার পুলিশ। অবরোধকারীদের বুঝিয়ে রাস্তা অবরোধ তুলে দেয়।
তৃণমূলের এই নেত্রীর কাজে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও রিনা দাসের সাফাই, কাঁথি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক মহিলার নগ্ন ছবি নিয়ে কয়েকজন ছেলে ব্ল্যাকমেইল করে। এই নিয়ে এলাকার কয়েকজন মাতব্বর সালিশি সভা ডাকেন। সালিশিসভায় মহিলার পরিবার যেতে অস্বীকার করায় ওই মাতব্বররা রেগে যান। তিনি বলেন, “গ্রামের মাতব্বররা চেয়েছিলেন সালিশিসভার মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে দিতে। কাউন্সিলর কেন হস্তক্ষেপ করছেন ? তাই আমাকে কালিমালিপ্ত করার জন্য চক্রান্ত করে কয়েকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আর সরকারি প্রকল্পের জন্য যে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে, সেটা মিথ্যে অভিযোগ। এর সঙ্গে আমি কোনওরকম ভাবে জড়িত নই। আর যারা অভিযোগ তুলছে তারা কাঁথি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আমি তাদের কাছ থেকে কেনই বা টাকা নেব ?”
এই নিয়ে কাউন্সিলর ও এলাকার মাতব্বরদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। ওই মহিলার পাশে গিয়ে আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন কাউন্সিলর রিনা দাস। যদিও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ মাতব্বররা। তাঁদের দাবি, তৃণমূল এই কাউন্সিলর একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। আর এই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আজ সরব হন তৃণমূল সমর্থকরা। তাঁরা বিক্ষোভের সময় স্লোগান দিতে থাকেন, রিনা দাসের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও । এছাড়া একাধিক স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিক্ষোভের জেরে যানজট তৈরি হয়। আটকে পড়ে মহকুমা হাসপাতালে যাওয়া একাধিক অ্যাম্বুলেন্স। এরপর কাঁথি থানার পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
শেখ সেলিম নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, “তৃণমূল কাউন্সিলর আমাদের কোনও সহযোগিতা করছেন না। বাড়ি দেওয়ার নাম করে এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার করে থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে। তিনি ভোটে জেতার পর এক দিনও ওয়ার্ড়ে যাননি। এলাকায় গিয়ে ধমক দিচ্ছেন। যাঁরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিটিংয়ে যাননি, তাঁদের কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না ।” যদিও রিনা দাস অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এই ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। কাঁথি পুরসভার দু’বারের প্রাক্তন পুরপ্রধান ও বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দু অধিকারী ফোনে বলেন, “এরা তো জনগণের ভোটে জয়ী হয়নি। এরা জনগণের কাছে কোনওভাবেই দায়বদ্ধ নয় । তাই নিজেদের আখের গোছাতে নেমে পড়েছে। সর্বত্র কাটমানি আর কাটমানি। কাঁথিও তার ব্যতিক্রম নয়। কাঁথির মানুষ এদের স্বরূপ বুঝতে পারছে।”