পূর্ব মেদিনীপুর: এগরা বিস্ফোরণকাণ্ডে ১২ জনের মৃত্যুর পর সক্রিয়তা বাড়িয়েছে প্রশাসন। একাধিক বাজি কারখানায় অভিযান চালিয়েছে জেলা পুলিশ ও সিআইডি। সোমবারও এগরার সাহাড়া গ্রামের ডোবা থেকে উদ্ধার হয়েছে বারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। বেশ কয়েকটি দোকানে তল্লাশি চালিয়েও প্রচুর বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় একজনকে। এরইমধ্যে এগরার খাদিকুল বিস্ফোরণকাণ্ডে নয়া তথ্য সামনে। অভিযোগ, ভানু বাগের বাজি কারখানা ‘মা সারদা আতস বাজি ভান্ডার’-এর লাইসেন্স দিয়েছিল তৃণমূল চালিত পঞ্চায়েতই। ভানুর লাইসেন্সে সই রয়েছে তৃণমূল প্রধানেরই। যদিও এই বিস্ফোরণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দু’মাস আগে বিজেপি ওই এলাকায় নির্দলকে সমর্থন করে পঞ্চায়েত তৈরি করে। তাদের তো খবর রাখা উচিত ছিল যে আবার নতুন করে এসব হচ্ছে।” কিন্তু ভানুর কারখানার লাইসেন্সে যে তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত প্রধানের সই, সে নথি উঠে এসেছে সামনে।
২০১৯ সালে এই পঞ্চায়েত থেকেই ভানু ট্রেড লাইসেন্স পান। সেখানে সই ছিল পঞ্চায়েত প্রধান শান্তিলতা দাসের। যদিও বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি এগরা-১ ব্লকের তৃণমূল পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রভুপদ দাস। সম্পর্কে তিনি পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী। তাঁর দাবি, যিনি সেক্রেটারি রয়েছেন, ট্যাক্স কালেক্টরকে লাইসেন্সের বই দিয়ে দেন। সেই বইয়ে একসঙ্গে ৩০০ থেকে ৪০০ স্লিপে সই করে দেন প্রধান। তাই প্রধানের পক্ষে কোথায় কী স্বাক্ষর হয়েছে, তা জানা সম্ভব নয়।
তবে ২০১৯ সালে লাইসেন্স নিলেও এরপর আর লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করাননি কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগ বলে অভিযোগ। যদি তেমনটাই হয়, তার অর্থ, এই মাঝের কয়েক বছর বিনা লাইসেন্সে ব্যবসা করেছেন তিনি। পুলিশের নজর এড়িয়ে কীভাবে এত বড় বাজির কারখানা চলছিল, আরও একবার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এগরার খাদিকুলে গত ১৬ মে ঠিক এক সপ্তাহ আগে এই মঙ্গলবারই একটি বাজির কারখানায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটে। প্রথমে ৯ জন মারা যান। পরে কারখানা মালিক ভানু বাগের মৃত্যু হয়। তারও পরে কলকাতায় চিকিৎসাধীন দু’জন পিঙ্কি মাইতি ও রবীন্দ্র মাইতির মৃত্যু হয়।
ঘটনার ঠিক সাতদিনের মাথায় ভানুর বাজি কারখানার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে শুরু নয়া বিতর্ক। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, “২০১৯ সালে তৃণমূলের প্রধান এই বাজি কারখানাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তৃণমূলের প্রত্যেক নেতা ভানু বাগের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে পকেট ভরতেন। অনেক বড় বড় মাথা যুক্ত। NIA তদন্ত ছাড়া সত্যিটা সামনে আসবে না। তৃণমূল লাইসেন্স দিয়ে অবৈধ ব্যবসাকে সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছে।”
যদিও কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তরুণ মাইতির কথায়, “এখানে তো পঞ্চায়েতের কোনও ত্রুটি নেই। ২০১৯ সালের পর পঞ্চায়েত ট্রেড লাইসেন্স রিনিউয়াল করেনি। আর দ্বিতীয়ত, মা সারদা বাজি ভান্ডার হিসাবে ট্রেড লাইসেন্সটা দেওয়া হয়। তার মানে ওটা আতসবাজির ভান্ডার ছিল। বাকিটা পুলিশও বলেছে। ওটা অবৈধ বাজি কারখানা। ২০২০ সালের পর আর লাইসেন্স রিনিউ করেনি। পুলিশ বারবার অভিযান চালিয়েছে। ২০২২ সালে অভিযোগও হয়েছে। ওরা বেল পেয়েছে। অর্থাৎ এটা প্রশাসনের ব্যাপার। তবে আমার পঞ্চায়েত বা ট্রেড লাইসেন্স যারা দেন, তারা এরসঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত না।”