পূর্ব মেদিনীপুর: শুভেন্দু অধিকারী এখন প্রাক্তন। ‘দক্ষ সংগঠক’কে হারিয়ে কি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল? একেবারে গ্রাসরুট লেভেল থেকে সংগঠনকে তৈরি করতে মরিয়া তৃণমূল? রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে গুঞ্জন। তৃণমূল নতুন করে যোগদানের দৃষ্টান্ত সেকথাই বলছে। রবিবারই দলে যোগ দিলেন এককালের দাপুটে নেতা মামুদ হোসেন। যিনি একসময়ে ‘শুভেন্দুর একনায়কতন্ত্র’ মনোভাবকে মেনে নিতে না পেরে দল ছেড়ে সিপিএম-এ গিয়েছিলেন। শুভেন্দু বিদায়ের পরদিনই প্রত্যাবর্তন হল তাঁর। তিানি মামুদ হোসেন (Mamud Hossain)।
রবিবার সকালে তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে দলীয় পতাকা হাতে তুলে নেন তিনি। এরপরই সাংবাদিক বৈঠকে উগরে দেন শুভেন্দুর ওপর ক্ষোভ। কেন তিনি দল ছেড়েছিলেন আবার কেনই বা তাঁর ফিরে আসা, সব বলেন মন খুলে। বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী একয়ানকতন্ত্র চালাতেন। অন্য কারোর নেতৃত্ব তিনি মেনে নিতে পারতেন না। আমরা সবাই মিলে আন্দোলন করেছিলাম। পরবর্তীকালে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। ”
২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহকারি সহ সভাধিপতি ছিলেন তিনি। নন্দীগ্রাম আন্দোলন, খেজুরি আন্দোলন থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক আন্দোলনের স্বাক্ষ্যবাহক। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। পরবর্তীকালে তৃণমূল ছেড়ে সিপিএম-এ যান। ২০১৬ সালে বামফ্রন্টের ডিএসপি দল থেকে এগরা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রধান শিক্ষক মামুদ হোসেন। এখন তিনি সিপিএমের থেকে সাম্মানিক বিচ্ছেদ চাইছেন মামুদ হোসেন।
শনিবার মেদিনীপুরের শাহি মঞ্চ থেকে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বক্তৃতা শেষ করেছিলেন ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ স্লোগান তুলে। তাঁর এই স্লোগানের বিরোধিতা তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা ভিন্ন আঙ্গিকে করেছেন। তবে মামুদ হোসেন অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে করলেন এই স্লোগানের তিরস্কার।
বললেন, “শিশিরদাকে আমরা দাদা বলি। সেই অর্থে ওঁ আমাদের ভাইপো। ওঁ বলছেন ভাইপো হঠাবার কথা, আমরা বলি ওঁকে হঠাও।” শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ” যিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে বলেছিলেন বিরোধী পক্ষকে সাফ করে দিলে ৫ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেন, যিনি নমিনেশনই ফাইল করতে দেননি, তিনি এখন গণতন্ত্রের কথা বলেছেন! যিনি মোদীকে হঠানোর কথা বলেছিলেন, তিনি এখন অমিত শাহর পায়ে মাথা নত করছেন।”
বিজেপির গতি রোধ করতেই তাঁর তৃণমূলে ফিরে আসা বলে জানান তিনি। বলেন, “সিপিএমের থেকে সাম্মানিক বিচ্ছেদ চাইছি। আমার ওই দলের প্রতি কোনও ক্ষোভ নেই। তবে শুভেন্দু অধিকারী জেলায় যেভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে. বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তৈরি করেছে, সেটা একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই রোখা সম্ভব।”
আরও পড়ুন: দুর্গার ফটো, একতারাতে বরণ করে নেওয়া হল শাহকে, বিতর্ক উস্কে সঙ্গীতভবনেও রাজনৈতিক নেতারা
মামুদ হোসেনের প্রত্যেকটি কথায় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শুভেন্দুর বিকল্প হিসাবেই মামুদকে এবার জেলায় দক্ষ সংগঠকের ভূমিকায় দাঁড় করাতে চাইছে তৃণমূল। ইস্তফা ঝড়ের আড়ালেই হয়তো প্রতিরোধের পথ তৈরি করছে তৃণমূল। সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির।