পুরুলিয়া: ঝালদা পুরসভা হাতছাড়া হল তৃণমূলের। আস্থা ভোটে তৃণমূলকে ছাপিয়ে গেল কংগ্রেস। কংগ্রেসকে এদিন সমর্থন করেন ২ নির্দল কাউন্সিলর। এদিকে, তলব সভায় কোনও কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না। এদিন তলবি সভা থেকে বেরিয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলর বলেন, “ঝালদায় তৃণমূলের পতন হল।”
প্রসঙ্গত, কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের পর থেকেই ঝালদা পৌরসভার অবস্থা টালমাটাল ছিল। ৮ মাস আগে ঝালদা পৌরসভার নির্বাচনের ফল হয় ত্রিশঙ্কু। মোট ১২ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ও কংগ্রেস পাঁচটি করে আসন পায়। নির্দলের ঝুলিতে যায় ২টি। ম্যাজিক ফিগারের জন্য উভয়ের প্রয়োজন ছিল নির্দলের সমর্থন। নির্দল সমর্থন করে তৃণমূলকে। ২ নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলকে সমর্থন করায় বোর্ড গঠন করে তৃণমূল।
অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ১৩ তারিখে ঝালদার পুরসভার পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন বিরোধীরা। ১২ আসনের পুরসভার পাঁচ কংগ্রেস কাউন্সিলর এবং এক জন নির্দল কাউন্সিলর অর্থাৎ মোট ছ’জন অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। আগে নির্দলের সমর্থন নিয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছিল তৃণমূল। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শীলা চট্টোপাধ্যায় দল ছাড়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় তৃণমূল। নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়ে পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন শীলা।
শীলা এবং তাঁর দলবল সরে আসায় তৃণমূল সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। ১৩ অক্টোবর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। নিয়ম মেনে পুরপ্রধান ১৫ দিনের মধ্যে কোনও পদক্ষেপ না করায় উপ-পুরপ্রধানের কাছে আবেদন করা হয়। নিয়ম হল, সাত দিনের মধ্যে উপ-পুরপ্রধানের পদক্ষেপ করার কথা। সেই মতো ৩ নভেম্বর উপ-পুরপ্রধান জানিয়ে দেন, আগামী ২১ নভেম্বর আস্থাভোট হবে। হাইকোর্টের নির্দেশে আস্থা ভোট হল ২১ তারিখেই। এদিন তলবি সভাতে অংশই নেয় না তৃণমূল।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতো বলেন, “পুরসভা আইনে বলা রয়েছে, চেয়ারম্যান ফেল করলে ভাইস চেয়ারম্যান মিটিং ডাকবে। এখানে কোথাও বলা নেই, ভাইস চেয়ারম্যান উপস্থিতি হয়ে সভা পরিচালনা করতে হবে। ১৩/২ ধারায় বলা রয়েছে সভার পরিচালনা করবেন কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে একজন, আমাদের বিপ্লব কয়াল সভাপতিত্ব করেছেন। হাইকোর্টের সম্মান ওরা দিতে পারতেন। তাহলে আরও বেশি খুশী হতাম।” এদিনের ফলাফল পঞ্চায়েত ভোটে প্রভাব ফেলবে বলে আশাবাদী তিনি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল কতটা নৃশংস হয়ে পুরবোর্ড দখল করতে পারে, ঝালদা তার প্রমাণ ছিল। ঝালদার কংগ্রেস নেতা কর্মীরা নৈতিকতা হারাননি। আজ ঝালদায় পুরবোর্ড গঠন করার কৃতিত্ব দিতে চাই নেপাল মাহাতোকে। তিনি পরিশ্রম করেছেন, শেষ পর্যন্ত লড়েছেন। নির্দল কাউন্সিলরাও কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে। ওঁরা অনেক রিস্ক নিয়েছেন। ভয় ভীতির রাজনীতি করেও ঝালদা পুরবোর্ড দখল করতে পারেনি তৃণমূল।”