পূর্ব মেদিনীপুর: রাজ্যে আছড়ে পড়ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রামিতের সংখ্যা। পূর্ব মেদিনীপুরেও নতুন করে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা দুশো ছুঁইছুঁই। চণ্ডীপুর এবং পাঁশকুড়া কোভিড হাসপাতালে উপচে পড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর। শয্যার অভাব। কিন্তু উৎসবে খামতি নেই মহকুমা শহরে। তৃণমূল (TMC) ও বিজেপি (BJP) দুই রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় ধুমধাম করে হল রামনবমী উৎসব। কিছু জায়গায় অবশ্যই করোনা বিধি মেনে হয়েছে পুজো। আবার কোথাও দেখা গেল গা ছাড়া ভাব।
জেলার এগরা, পটাশপুর, নন্দীগ্রাম, কাঁথি সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে সাড়ম্বরে রামপুজো। অধিকারী গড় কাঁথিতে আনুষ্ঠানিকভাবে রাম নবমীতে জমায়েত বন্ধ হলেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বিজেপির তরফে শহর জুড়ে লাগানো হয়েছে রামনবমীর সমর্থনে পতাকা, লিফলেট। বেশ একটা উৎসব ভাব। উল্টোদিকে তৃণমূলের তরফেও শহরে নানা প্রান্তে উড়ছে ধর্মীয় ধজ্জা।
তৃণমূলের তরফে কাঁথি পুর প্রশাসক সিদ্ধার্থ মাইতির বলেন, “করোনা বিধির দিকে খেয়াল রেখে আমরা ইতিমধ্যে মাস্ক ছাড়া শহরে প্রবেশ নিষেধ করেছি। তাই রামনবমীর অনুষ্ঠান বড় না করে ধর্মীয় আচার মেনেই ছোট আকারে উৎসব পালন করছি।” একুশের ভোটকে সামনে রেখে এবার কী রামনবমী পুজোয় বেশি উৎসাহ? এই প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে তাঁর কটাক্ষ, “রামনবমী আমরা আগে থেকেই পালন করতাম। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করিনা। ওই একটা কাজ বিজেপি ভাল করে।”
এদিকে বিজেপির তরফে অধিকারীদের খাস তালুক কাঁথির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিব মন্দির প্রাঙ্গনে রাম নবমী উৎসব পালন হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কাঁথি পৌর প্রশাসক সৌমেন্দু অধিকারী, প্রাক্তন কাউন্সিলর সত্যেন জানা, অতনু গিরি এবং উত্তর কাঁথির বিধায়ক বনশ্রী মাইতি। বিজেপি নেতা অতনু গিরির দাবি, “এবার অবনেক বড় উৎসব করার কথা ছিল। তবে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি কথা মাথায় রেখে শিব মন্দির প্রাঙ্গনে রীতিনীতি মেনেই কতিপয় মানিষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়েও নজর রাখা হয়েছে। ভোগ বিতরণ করা হয়।”
তবে রাজনৈতিক দলগুলির এই দাবি সত্ত্বেও আলাদা ছবি চোখে পড়েছে। কোথাও মাস্ক বিহীন মুখে মহিলাদের অঞ্জলি দেওয়ার ছবি দেখা গিয়েছে। কোথাও হয়েছে ভোগ বিতরণ। অন্যদিকে, দিঘাতে সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করেই চলছে পর্যটকদের আনন্দের সমুদ্র স্নান।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জনসংখ্যা ৫১ লক্ষ। আর কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা মাত্র ২টি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় স্বাস্থ্য জেলা দুটি, নন্দীগ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুর। অথচ ভ্যাকসিন, হাসপাতাল, পরীক্ষাকেন্দ্র ও চিকিৎসা পরিকাঠামো সবেতেই অপ্রতুলতা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবিলম্বে কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা, বেড সংখ্যা, পরীক্ষার কিট-সহ চিকিৎসা পরিষেবা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জেলাশাসক। নন্দীগ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলার প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি মামুদ হোসেন। জেলা জুড়ে কোভিড সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও কোভিড বিধি বাধ্যতামূলক মেনে চলতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলোকে সক্রিয় করে তুলতে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: কুম্ভ থেকে শিক্ষা, অযোধ্যায় রামনবমী মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত যোগী প্রশাসনের
যদিও কাঁথির সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি ও ক্ষমতা আদায়ের ক্ষেত্রে জমায়েত অনুষ্ঠান ও মিটিং মিছিল করছে। তাতে কি কোভিড বিধি মানা হচ্ছে?