সেবক: নেপাল ও ভুটানের মধ্যে অবস্থিত ভারতের ছোট্ট রাজ্য সিকিম। সিকিমের উত্তরে রয়েছে চিন সীমান্ত। কিন্তু ভারতের এই রাজ্যে কোনও রেলপথ নেই। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সড়কপথে গাড়ি করেই যেতে হয় সিকিমে। কিন্তু খুব শীঘ্রই রেলপথ চালু হতে রয়েছে এই রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে রেলপথ। এই রেলপথ চালু হলে ওই এলাকার যাতায়াতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বেশ কিছু কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে উঠতে পারে এই রেলপথ। ওই এলাকার অর্থনীতিতে যেমন প্রভাব ফেলতে পারে সেবক-রংপো রেলপথ। তেমনই জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়েও এর গুরুত্ব রয়েছে।
টানেলের মধ্যে দিল রেললাইন
সেবক- রংপো রেলপথ হবে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। টানেলের মধ্যে দিয়েই যাবে এই রেললাইনের অধিকাংশ অংশ। প্রায় ৩৮ কিলোমিটার রেল পথই থাকবে টানেলের মধ্যে দিয়ে। এই রেলপথের জন্য মোট ১৪টি টানেল তৈরি করছে রেল। এর মধ্যে দীর্ঘতম টানেলটি ৩ কিমোমিটারেরও বেশি লম্বা। পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার তারখোলা ও টুংলাংখোলার মধ্যে এই টানেল অবস্থিত। সেই টানেল নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রবিবার তিনি এই রেললাইন নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করেন। ভারতীয় রেল সম্প্রতি এক টুইটে জানিয়ে, রেলপথের মোট টানেল তৈরির ৬৭ শতাংশ কাজই শেষ হয়ে গিয়েছে।
টানেল তৈরিতে শ্রমিক মৃত্যু
পাহাড়ি দুর্গম পথের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয়েছে সেবক-রংপো রেলপথ। গত কয়েক বছর ধরেই এই নির্মাণকাজ চলছে। টানেলের কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটনা অতীতে সামনে এসেছে। বর্ষার সময় কাজ করতে গিয়ে টানেলে ধসের জেরেই বিভিন্ন সময়ে অনেকর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকায় টালেন তৈরি করাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় হওয়ায় সতর্কতা বজায় রেখে তৈরি করা হয়েছে এই টানেল।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন
সেবক ও রংপোর মধ্যে সংযোগকারী রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে একাধিক টানেল ও সেতুর মধ্যে দিয়ে। ১৪টি টানেল ছাড়াও থাকছে ২২টি ব্রিজ। এই লাইনে মোট পাঁচটি স্টেশন থাকবে। এর জেরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিকিম যাওয়া অনেক সহজ হবে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন এই রেলপথ। বর্ষার সময় ধসের জেরে সিকিমগামী এক মাত্র জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেই সময় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সিকিম। সেই অবস্থা বদলে যাবে এই রেলপথ তৈরি হলে।
প্রতিরক্ষায় প্রভাব
সিকিমের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে চিন সীমান্ত। সিকিম শেষ হলেই চিনের এলাকা শুরু হয়ে যায়। তাই নিরাপত্তার জন্য এই এলাকায় বিশেষ নজর থাকে সেনাবাহিনীর। ডোকালাম এখান থেকে মোটেই বেশি দূরে নয়। এই ডোকালামেই বছর খানেক আগে ভারত ও চিনের সেনা মুখোমুখি হয়েছিল। তা ঘিরে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের উত্তাপ চরমে ওঠে। সেই পরিস্থিতি তৈরির পর থেকেই ওই এলাকায় প্রচুর বাহিনী মোতায়েন করেছে সেনা। ডোকালাম থেকে শিলিগুড়ি করিডর মোটেই দূরে নয়। দেশের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে শিলিগুড়ি করিডর যা চিনেকস নেক নামে পরিচিত তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রেলপথ তৈরি হলে সেনার যাতায়াত ও যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়াও সহজ হবে। জাতীয় নিরপত্তার ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।