কলকাতা: ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইডি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ এসেছে একদিন আগেই। সোমবারই বিশেষ ইডি আদালত শেখ শাহাজাহানকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইডি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে আম-আদমির জায়গা-জমি দখলেরও বিস্তর অভিযোগ আদালতে তুলেছেন ইডি-র আইনজীবীরা। প্রথম দফায় তদন্তে ৩১ কোটি টাকারও বেশি খোঁজ মিলেছে বলে খবর। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, চিংড়ি মাছের ব্যবসার আড়ালে ১৩৭ কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন শাহজাহান। উঠে আসছে দুটি সংস্থার নাম। সূত্রের খবর, মাছের রফতানির কাজ করতে এই দুই সংস্থা। তাঁদের হাত ধরেই শাহজানের সংস্থায় ওই পরিমাণ টাকা ঢুকেছিল। আগেই জমি দখল করে মাছের ভেড়ি নির্মাণ ঘিরে একাধিকবার শাহজাহান-শিবু হাজরার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন সন্দেশখালির সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাছ ব্যবসা ঘিরে কয়েকশো কোটি টাকার রোজগার নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা। এখানে জীবন জীবিকার পথ খুলতে গেলেও শেখ শাহজাহান। আসতে গেলেও শাহজাহান ভাইয়ের দরবার। অভিযোগ, এই দরবারে নজরানা না দিয়ে বাঁচার উপায় নেই।
দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মাছ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে শাহাজহানের বাহিনীর দখলদারি কীভাবে চলছে সে কথা বলছেন সকলেই। সন্দেশখালির নোনা জলে সোনার ফসলের নাম বাগদা চিংড়ি। সেই ফসলের বীজতলা থেকে আড়তে বিক্রি, অভিযোগ প্রতি ধাপে ছিল শাহজাহান ভাইয়ের করপ্রথা।
শোনা যায়, একটা সময় ছিল যখন পিন বা চিংড়ির চারা বিদ্যাধরী নদী থেকে ধরে ভেড়ির মাছ চাষীদের বিক্রি করতেন জেলেরা। হাজার পিনে ৫০০ টাকা রোজগার হতো। বছর চারেক আগে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সম্রাট শাহজাহান জারি করেন নতুন ফতোয়া। স্পষ্ট বলা হয় জেলেরা ভেড়ির মালিকদের আর সরাসরি পিন বিক্রি করতে পারবেন না। সব পিন ধামাখালিতে শেখ শাহজাহানের মেয়ের নামে তৈরি পিন মার্কেটে বিক্রি করতে হবে।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে এরপরই ন্যাজাট, মালঞ্চ, ঘুসিঘাটায় পিন বিক্রির ব্যবস্থা বদলে যায়। একনায়কতন্ত্র কায়েম হতেই জেলেদের হাজার পিনে ৫০০ টাকার পরিবর্তে দেওয়া হতে থাকল ৪০০ টাকা। অভিযোগ, ৪০০ টাকায় পিন কিনে সেই পিন ফিশারি মালিকদের ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হতো। শাহজাহান ব্যবস্থায় স্বাধীন রোজগারের পথ হারালেন গরিব জেলেরা।
যাঁতাকলের শিকার ভেড়ি মালিকেরা
এই যাঁতাকলের শিকার ভেড়ি মালিকেরাও। নোনামাটির জলের ফসলে দাদন বা অগ্রিম দেন আড়তদারেরা। বিঘা পিছু দাদনের দর ৭-১৩ হাজার টাকা। অভিযোগ, ঠিক ছিল শাহজাহান প্রথায় তাঁর দেওয়া দাদন নিলে ভেড়ির মালিকদের শাহজাহানের আড়তেই মাছ বিক্রি করতে হবে। অভিযোগ, এখানে না শোনার অভ্যাস নেই শাহজাহানের। আড়তের মাছ কিনবে শাহজাহানের ঠিক করে দেওয়া ব্যবসায়ী। স্থানীয় ভাষায় যাদের বলা হয় পার্টি। এই সকল পার্টির মাধ্যমে চিংড়ি কোম্পানিগুলিকে মাছ সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা শেখ শাহজাহানের। অভিযোগ, কোম্পানি যে দরে মাছ কেনে শাহজাহান প্রথায় সেই দর পান না চাষীরা। সেখানেও রয়েছে টাকা না দিয়ে এজেন্টদের টাকা লুঠের অভিযোগ। সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের নিজের নামে মার্কেট। মালঞ্চ, শিরিষতলা, সরবেড়িয়ায় মাছের কাঁটা— এই ব্যবস্থারই অঙ্গ। সেই ব্যবস্থায় আগের মতো লাভ নেই বলে অভিযোগে আগেই সরব হয়েছিলেন আড়তদারেরা।
সোজা কথায়, শাহজাহান অনুগামীদের কাছে যা ব্যবসায়িক কৌশল, সন্দেশখালির মানুষের কাছে তা দম রোধ করা এক ব্যবস্থা। আড়তদারের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা যে মাছ কিনছে সেই টাকার জোগানও শেখ শাহজাহানের। নোনা জমির ফসল যে সকল সংস্থায় রপ্তানি হচ্ছে সেখানেও শাহজাহান প্রথাই বাস্তব। আমদানি থেকে রপ্তানি ব্যবস্থায় এই একচেটিয়া আধিপত্যের নামই শেখ শাহজাহান। অভিযোগ এতটাই গুরুতর।