মদন মিত্রের নামে পোস্টার, অনুগামীরা বুঝিয়ে দিলেন ‘দাদার’ অবস্থান
শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো 'বেসুরো' তৃণমূল বিধায়কদের 'সৌজন্যে' রোজই এ ছবি চাক্ষুষ করছেন বাংলার মানুষ। এরইমধ্যে আবার মদন মিত্রের নামে পোস্টার।
মঙ্গলবার সোনারপুর শহরের একাধিক জায়গায় এই পোস্টার দেখা যায়। পোস্টারগুলিতে মদন মিত্রর ছবির সঙ্গে লেখা, ‘আমাদের প্রিয় মদনদা ছিলো, আছে, থাকবে’। সৌজন্যে ‘আমরা দিদির সৈনিক’। এই পোস্টার দিয়ে মদনের ‘অনুগামী’রা বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁদের ‘দাদা’ দলের সঙ্গে, দলনেত্রীর সঙ্গে। ‘কাজই যার ধর্ম’।
রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈনিক হয়ে থেকেছেন কামারহাটির এই তৃণমূল নেতা। তবে সারদা কাণ্ডে মদনের গ্রেফতারি চাপ বাড়ায় দলের অন্দরে। এরপর থেকে দীর্ঘদিন মদন মিত্রর থেকে তফাতে থেকেছে দল। কিছুদিন আগে কামারহাটিতে হনুমান চল্লিশাও পড়তে শোনা যায় মদনকে। যা উস্কে দিয়েছিল মদনের দল বদলের জল্পনা।
এরইমধ্যে পরিবহণ দফতরের নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রকে। দফতরের একটি কমিটির মাথায় বসানো হয় তাঁকে। পুরনো দফতরে ঢুকে প্রথম দিন স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই মদনের সমর্থনে এদিনের পোস্টার বুঝিয়ে দিল তৃণমূল নতুন করে ‘দাদাকে’ গুরুত্ব দেওয়ায় ‘দাদা’ও দলের প্রতি, দলনেত্রীর প্রতি আনুগত্য়র পাল্টা প্রকাশ ঘটাচ্ছে।
বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, বঙ্গ রাজনীতির পটে ততই নিত্য নতুন ছবি। শাসকদলের ক্ষেত্রে সে ছবি অনেক বেশি চমকদার। ইদানিং বাংলায় ভীষণভাবে নজর কাড়ছে ‘পোস্টার রাজনীতি’। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হওয়া ইস্তক কলকাতা-সহ একাধিক জেলায় তাঁর সমর্থনে পোস্টার পড়েছে। কোথাও লেখা ‘আমরা দাদার অনুগামী’, আবার কোথাও লেখা রয়েছে ‘মানুষের কাজ করতে কোনও পদ লাগে না’। মোটামুটি প্রতিটি পোস্টারের সুরই এক, ‘শুভেন্দু একাই একশো’।
সেই ধারা অনুসরণ করেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনেও একাধিক জায়গায় পোস্টার পড়া শুরু হয়েছে। কোনও পোস্টারে রাজীবকে ‘সততার প্রতীক’ বলা হয়েছে, কোনওটায় আবার লেখা হয়েছে তিনি ‘কাজের মানুষ কাছের মানুষ’। দক্ষিণ কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে দলের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করার পরদিন থেকেই এই পোস্টার-পর্ব শুরু হয়। এ নিয়ে রাজীব মুখও খোলেন। বলেন, ‘আমার এই ধরনের প্রচারের কোনও প্রয়োজন নেই। আমি এগুলি সমর্থনও করি না।’
আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকারী আজও কেন বিয়ে করেননি, ব্যাখ্যা দিলেন নিজেই
কিন্তু রাজ্যজুড়ে ‘বেসুরো’ পোস্টারের ভিড়ে মদন মিত্রের সমর্থনে এই পোস্টার কিছুটা হলেও মান রেখেছে তৃণমূলের। অবশ্য জেলা তৃণমূল এই পোস্টারের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র জীবন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “আজকাল এসব নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। মদন তো আমাদেরই। এতে কোনও অসুবিধার তো কিছু নেই।” অন্যদিকে বিজেপি আবার এই দল ঘেঁষা পোস্টারকে বাজার গরম করার কৌশল বলে মনে করছে। বিজেপির দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বসন্ত শেঠিয়া বলেন, “ওরা বোধহয় এ ধরনের প্রচার করে কিছু মাইলেজ পেতে চাইছে।” তবে কারণ যাই হোক না কেন, ‘মদনদার’ এই পোস্টার বাংলা বাজারে যে বেশ সাড়া ফেলেছে তা অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই।