গোসাবা: কথায় আছে নদীর একূল ভেঙে গড়ে ওকূল, কিন্তু পুইজালি এলাকায় মানুষেই ভেঙে দিচ্ছে নদীর কূল। পুই তেতুলতলা এলাকায় রায়মঙ্গল নদীর বাঁধের গা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ইট। এই রায়মঙ্গলের একপাড়ে সন্দেশখালি, অন্যপাড়ে গোসবা। যে ইট সরকারের তরফে নদী বাঁধ রক্ষা করা ও গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য দেওয়া হয়েছিল, সেই ইটই কার্যত হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাসীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। অভিযোগ, চলছে কালোবাজারি। প্রকাশ্য দিবালোকে, কখনও রাতের অন্ধকারে চলছে চুরি হয়ে যাচ্ছে বাঁধের ইট।
গ্রামবাসীরাই বলছেন, বাঁধের গা থেকে ইট খুলে তা বিক্রি করা হয় খোলা বাজারে। কখনও আবার টাকা নিয়ে গ্রামের অন্দরেই কোথাও কোথাও বেচে দেওয়া হচ্ছে। কাজ করছে অসাধু চক্র। এরকমই গ্রামের এক ব্যক্তির থেকে টাকা নেওয়া হলেও তাঁকে সম্পূর্ণ ইট দেওয়া হয়নি। গ্রামের মানুষদের একটা বড় অংশ আবার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। যা নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। অভিযোগের তির গ্রামেরই তৃণমূল নেতা নিত্যানন্দ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। যিনি আবার রঞ্জন মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
এলাকার বাসিন্দা দেবব্রত মণ্ডল বলছেন, “রঞ্জনবাবু তো এসেছিলেন। ইটগুলো তুলে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্লাবেও কিছু দেওয়া হয়েছে। রঞ্জন মণ্ডল করছে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে তো মারবে।”
তবে নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন নিত্যানন্দ চক্রবর্তী। বলছেন, মানুষের স্বার্থেই রাস্তা তৈরিতে ইটগুলি ব্যবহার করা হয়েছে পঞ্চায়েতের তরফে। বিক্রি করা হয়নি ওই ইট। পাবলিকের কাজে লেগেছে। আর টাকা নিয়ে ইট না দেওয়ারও কোনও গল্প নেই। সব সাজানো। অন্যদিকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগকে অস্বীকার করছেন রঞ্জন মণ্ডলও। উল্টে সংবামাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় তাঁকে। রীতিমতো রেগেই বলেন, “যাঁরা বলছে বিক্রি হয়েছে তাঁদের থেকে জানুন কাদের বিক্রি করা হয়েছে। যীশু যখন ক্রশবিদ্ধ হয়েছিলেন তখন যাঁরা তাঁকে ক্রশবিদ্ধ করেছিল তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন ভগবান ওদের মঙ্গল করুক। আমি রাজনীতি আসার আগে আমার যা সম্পত্তি ছিল এখন কত আছে সবটা দেখলেই বোঝা যাবে। আমি যদি পাপ করে থাকি তাহলে আমার শাস্তি হোক। মানুষের সেবা করা আমার অপরাধ হয়ে গেছে।” তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে গোষ্ঠী কোন্দলের কথাও। যদিও এই ঘটনার খবর কিছুই জানেন না গোসাবা বিধানসভায় উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল। তিনি বলছেন, “আমি এখনও এরকম কোনও খবর পাইনি। আর এর সঙ্গে গোষ্ঠী কোন্দলের কোনও বিষয় আছে কিনা আমার জানা নেই।”