দক্ষিণ ২৪ পরগনা: জল নিকাশির জন্য কাটা হয়েছিল রাস্তা। আর তা নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষ। তলোয়ার, আগ্নেয়াস্ত্র-বন্দুক নিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ঘোরাফেরা করেছিলেন গ্রামবাসীরা। ভাঙড়ের সেই ছবি ভাইরাল হতেই চাঞ্চল্য ছড়াল। সেই ঘটনায় ধরপাকড় শুরু করল পুলিশ। শনিবার রাতভোর অভিযান চালিয়ে কাশীপুর থানার পুলিশ মোট পাঁচজনকে আটক করেছে। উদ্বার করেছে তিনটি এক নলা বন্দুক ও পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ।
এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে বানিয়াড়া গ্রামের বুথ সভাপতি সামাদ মোল্লাকে। ঘটনায় সরাসরি এই তৃণমূল নেতা যুক্ত ছিলেন বলে সূত্রের খবর। আগেই ভোগালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বানিয়াড়া গ্রামের তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য মান্যবর মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতার করে শনিবার বারুইপুর আদালতে পেশ করলে আদালত তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে জোর রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি জেলা সভাপতি সুনীপ দাস ভোগালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মোদাসসের হোসেনের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন। ভোগালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মোদ্দাসের বলেন, “আমি অপরাধ করলে আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করুক কোন অসুবিধা নেই। আইন আইনের কাজ করবে।”
গত শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়ের ভোগালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। ঘটনার সূত্রপাত দুটি গ্রামকে ঘিরে। বাগজেলা খালের পাড়ে বানিয়াড়া ও চিলেতলা গ্রামের মধ্যে বিবাদ। প্রবল বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে চিলেতলা গ্রামের চাষির জমি। জল ওঠে বাড়িতেও। তাই বাধ্য হয়েই এক রকম জল নিকাশির জন্য চিলেতলা গ্রামের বাসিন্দারা জল নিকাশির জন্য খালের পাড়ের রাস্তা কাটেন।
অভিযোগ, সেই সময় বানিয়াড়া গ্রামের লোকজন বাধা দেন। তা নিয়ে শুরু হয় অশান্তি। বচসা চেহারা নেয় সংঘর্ষের। অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে হামলা করতে থাকেন বানিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দারা। লাঠি-সোঁটা নিয়ে পালটা হামলা করেন চিলেতলার বাসিন্দারাও চলে দুপক্ষের সংঘর্ষে। জমা জলের মধ্যেই চলে হামলা। আগ্নেয়াস্ত্র-বোমা নিয়ে অতর্কিতে তাদের উপর হামলা চালায়।
দুপক্ষের সংঘর্ষে মাথা ফাটে কয়েকজনের। অপর দিকে বানিয়াড়া গ্রামের মানুষের অভিযোগ, গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই রাস্তা। সেই রাস্তাটিই কেটে চিলেতলা গ্রামের মানুষ অসুবিধা তৈরি করেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায় কাশীপুর থানার পুলিশ।
গ্রামে ঢোকার মুখেই দেখা যাচ্ছে, অস্ত্র, তলোয়ার নিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন কয়েকজন। সরু করে কাটা নালির সামনেই অস্ত্র হাতে পাহারা দেন তাঁরা। হাতিয়ার হাতে প্রকাশ্যে এই ভাবে গ্রামবাসীদের ঘোরাফেরার ছবি সামনে আসায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।
TV9 বাংলায় ওই এলাকার দৃশ্য সম্প্রচারিত হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। বানিয়াড়া গ্রামে পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী। এলাকায় ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সেদিনই ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়। ঘটনার পর থেকে এলাকা ছাড়া ছিল অনেকেই। শনিবার রাতভর চলে অভিযান। এখনও গ্রামে চাপা উত্তেজনা রয়েছে।