কলকাতা: মনোনয়ন পর্বেই (Panchayat Election 2023) রণক্ষেত্র ভাঙড় (Bhangar)। মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা ফাটছে। অভিযোগ মূলত তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আইএসএফ কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভাঙড়ে। সেই কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাতে নবান্নে ছুটেছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। কিন্তু বিধায়কের বক্তব্য, মমতার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়নি তাঁর। জানা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না হওয়ায় চিঠি দিয়েই ফিরতে হয়েছে নওশাদকে। আর এরপরই টিভি নাইন বাংলায় একান্ত সাক্ষাৎকারে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক। জানালেন, কী বিষয়ে দেখা করতে যাচ্ছিলেন, সেই নিয়ে আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে ই-মেল করেছিলেন তিনি।
নওশাদের বক্তব্য, ‘রাজ্যের পরিস্থিতি, মনোনয়ন জমা করাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা, তা থেকে যাতে ভাঙড়বাসী ও রাজ্যবাসী নিস্তার পান এবং আরও কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য তাঁর কাছে পৌঁছেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় মুখ্যমন্ত্রী তথা আমাদের অভিভাবিকা ব্যস্ত থাকার জন্য আমি সময় পাইনি।’ বিধায়ক জানালেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অফিসাররা বলেছিলেন, আজ যদি বিধায়ক কোনও চিঠি নোট আকারে দিয়ে যান, তাহলে আগামিকাল বা পরশু যদি মুখ্যমন্ত্রী ফাঁকা থাকেন… তাহলে বিধায়ককে জানানো হবে। বিধায়কের বক্তব্য, ‘আগামিকালই তো মনোনয়নের শেষ দিন। তাই তিনি অফিসারদের বলছেন, আগামীতে তাঁর কোনও প্রয়োজন হলে তিনি অবশ্যই আসবেন।’
ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু ভাঙড়ের ছবি যেন আর বদলায় না। অতীতেও বার বার উত্তপ্ত হতে দেখা গিয়েছে ভাঙড়কে। আর এবারও পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব থেকেই কার্যত রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে ভাঙড়। রেহাই পাচ্ছেন না সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। কেন বার বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ভাঙড়ে? প্রশ্ন করায় ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক বললেন, ‘শাসক যদি চায়, বিরোধীদের সুষ্ঠুভাবে মনোনয়ন জমা করতে দেবে, বিরোধী কণ্ঠকে বাঁচিয়ে রাখবে… তাহলে এমন ঘটনা ঘটে না। ৯ তারিখ থেকে মনোনয়নের কাজ শুরু হয়েছে। সেদিন থেকে মারধর করা হচ্ছে। ১২ তারিখ আমাদের জেলা সভাপতিকে মারধর করা হয়েছে। ওই দিনই আমাদের মহিলা নেত্রীকে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেছে। গতকালও মনোনয়ন দিতে গিয়ে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছে। আজ আরও ব্যাপকভাবে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।’
নওশাদ সিদ্দিকী বললেন, ‘শাসকের ছত্রছায়ায় যারা আছে, তারা ব্যাপকভাবে বিশৃঙ্খলা করেছে। সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, ১৪৪ ধারা থাকার পরও বিডিও অফিসের আশপাশে কীভাবে জমায়েত করা হয়েছে। সেখান থেকে আইএসএফের বিরুদ্ধে কী ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। আমি একজন বিধায়ক, আমার সম্পর্কেও কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে।’ নওশাদের বক্তব্য, ‘ভাঙড়ের মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। কিছু রাজনৈতিক কারবারিরা তাঁদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, এই ধরনের অরাজকতা করছেন। আমরা তো রাজনীতিতে এসেছি মানুষের সেবা করার জন্য। তাহলে মারামারি, হানাহানি হচ্ছে কেন? কারণ, ওঁরা জানেন মনোনয়ন জমা পড়লে মানুষ শাসকের বিরুদ্ধে ভোট দেবে আর তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে, যাতে আগামী পাঁচ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিকে সামনে রেখে তাঁরা আরও বেশি করে অরাজকতা করতে পারেন।’
একদিকে যেমন ভাঙড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তেমনই আইএসএফ-এর বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠে আসছে। আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ। মার, পাল্টা মার। এমনই কি পরিস্থিতি এখন ভাঙড়ে? যদিও নওশাদ বলছেন, ‘মারের পাল্টা মারের পক্ষপাতী আমি নই। অভিযোগ তো যে কেউ করতে পারে। আমার বিরুদ্ধেও তো একাধিক ধারায় অভিযোগ করে দীর্ঘদিন জেলবন্দি করে রেখেছিল। পরে হাইকোর্টে গিয়ে জামিন পেয়েছি। অভিযোগ অনেকেই অনেকের বিরুদ্ধে করছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হল, শাসক দল বিভিন্ন এলাকা থেকে বিডিও অফিসকে দখল করে মনোনয়ন করেছে। সেখানে প্রধান প্রতিপক্ষ আইএসএফ-কে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয়নি।’ আগামিকাল মনোনয়নের শেষ দিন। কালও যদি একইভাবে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে কী করবে আইএসএফ? নওশাদের সাফ বক্তব্য, যদি বাধা দেওয়া হয়, মনোনয়ন জমা না দিয়েই ফিরে আসতে হবে। কারণ, ‘মারের পাল্টা মারে’ তিনি বিশ্বাসী নন।