ভাঙড়: একদিকে মুহুর্মুহু বোমাবাজি। লাঠি-অস্ত্র হাতে নিজেদের তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করা যুবকদের উন্মত্ত দাপাদাপি। তখন শাসকদলেরই নেতার বক্তব্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন TV9 বাংলার সাংবাদিক। আর সে সময়েই সাংবাদিককে ছক করে ঘিরে ফেলা, তাঁকে ধাক্কা মারতে মারতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, সঙ্গে অশ্লীল, অশ্রাব্য গালিগালাজ আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মার। শুধু তাই নয়, অশান্তির ছবি সংগ্রহ করার কারণে TV9 বাংলার চিত্র সাংবাদিককে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানোর চেষ্টা।
আইএসএফ-এর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ঘিরে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষের এটাও একটা দিক। মনোনয়ন ঘিরে একটা নিতান্ত রাজনৈতিক খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে যেখানে আক্রান্ত হতে হয়েছে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে। কিন্তু এতক্ষণে যে গোটা দৃশ্যপট বর্ণনা করা হচ্ছিল, তাতে কোথাও কোনও একজন পুলিশকর্মীর কথা উঠে এল না। কেন? ভাঙড়-২ বিডিও অফিসে যখন মনোনয়ন চলছিল, তখন ওই চত্বর তো বটেই, নলমুড়ি এলাকায় প্রচণ্ড উত্তপ্ত ছিল। গোটা ঘটনায় TV9 বাংলার দুই সাংবাদিক ও তাঁদের সহকারী চিত্র সাংবাদিক সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন। যেখানে ক্যামেরার কোনও প্যান অ্যাঙ্গেলেই ধরা পড়েনি একজনও পুলিশ কর্মীকে। TV9 বাংলার আক্রান্ত সাংবাদিক সায়ন্ত ভট্টাচার্যকে যখন ঘিরে ধরে বাঁশ দিয়ে মারা হয়েছে, সাময়িকভাবে চোখেমুখে অন্ধকার দেখেছিলেন তিনি। সম্বিৎ ফিরতে তিনি দেখেছেন, সেখানে একজন পুলিশ লাঠি হাতে। বেলাগাম সন্ত্রাসের মুখে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের আক্রান্তের একমাত্র ‘প্রশাসনিক’ সাক্ষী। কিন্তু প্রশ্ন, বাকি পুলিশ তবে কোথায়?
TV9 বাংলার আরেক সাংবাদিক যে তখনও ভাঙড়ের বিডিও অফিসের সামনেই রয়েছেন। তাঁর সহকর্মী সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়লেন এক গুচ্ছ উর্দিধারী। কেউ চেয়ার পেতে মোবাইলে গেম খেলছেন, কেউ গাড়ির দরজা খুলে বসে পা দুলোচ্ছেন, কেউ গাছের ছাওয়ায় আরামে বসে নিছক আড্ডায় ব্যস্ত। ভিতরে তথাকথিত মনোনয়ন আর বাইরে এহেন ‘পুলিশি প্রহরা’। অদূরে আক্রান্ত গণমাধ্যম।
মঙ্গলবারও মনোনয়ন নিয়ে অশান্ত থেকেছে ভাঙড়। তবে এদিন তা মাত্রা ছাড়া। এদিন ভাঙড়ের সওকতের এলাকার ভয়ঙ্কর রূপ দেখল বাংলা। আবারও প্রশ্ন উঠল, পুলিশ প্রশাসন তবে কী করছে? বাংলার নির্বাচনের নিরাপত্তার দায়িত্ব কি তবে কেবল পুলিশেরই ওপরে? নিরাপত্তার ইস্যুতে কমিশনের কোর্টেই বল ঠেলেছে হাইকোর্ট। এবার দেখার, এই পুলিশ দিয়েই কি বাংলার ভোট করাবে কমিশন?