হরিদেবপুর: ঘটনার শুরুটা হয়েছিল প্রমোটিং নিয়ে। নিজের জমিতে বাড়ির ছাদ বানাতে চেয়েছিলেন এক মহিলা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় তিন প্রমোটার। একজন আবার পেশায় চিকিৎসকও। তবে মহিলা রাজি না হওয়ায় তাঁকে একাধিকাবার বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর সোমবার ঘটল মর্মান্তিক ঘটনা। প্রাতঃভ্রমণে যাওয়ার পর অচৈন্য অবস্থায় উদ্ধার হন তিনি। পরে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তবে কী কারণে এই মৃত্যু তা এখনও জানতে পারা যায়নি। রহস্যের সমাধানে নেমেছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ।
মৃতার নাম লক্ষ্মী দেবী সাউ। পরিবারের সঙ্গে ছোট একটি জায়গায় থাকতেন। ওই ছোট্ট জায়গার মধ্যেই নিজেরা ছাদ বানাতে চেয়েছিলেন বাড়িতে। লক্ষ্মীদেবীর পাশের ফ্ল্যাটেই থাকতেন সমীর চক্রবর্তী, কিশোর কুমার গুপ্তার এবং ‘ডাক্তারবাবু’ নামে পরিচিত এলাকায় এক ব্যক্তি। অভিযোগ, তাঁরা তিনজন চেয়েছিলেন ওই জায়গাটা প্রমোটিং করতে। তাই ওই মহিলাকে বারবার বলেছিলেন যাতে তিনি নিজের বাড়িতে ছাদ না তৈরি করেন।
এই নিয়ে এর আগেও একাধিকবার বচসা হয়েছে ওই গৃহবধূর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাঁদের। এমনকী হরিদেবপুর থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই পরিবার। তবে কোনওরকম সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ। এমনকী, উল্টে তাঁদের কাজ করতে বাধা এবং মিস্ত্রিদেরও তুলে আনা হয়েছিল থানায় বলে অভিযোগ করেন লক্ষ্মীদেবীর পরিবার।
এরপর রবিবার (গতকাল) ওই তিনজন মিলে গৃহবধূকে নিয়ে একটি মিটিং করেন। সেখানে বলা হয়, ওই গৃহবধূ যেন ছাদ তৈরি না করেন। প্রতিউত্তরে মহিলা জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর জায়গায় প্রমোটিং করতে দেব না।
এরপর আজ সকালবেলা তিনটের সময় ওই গৃহবধূ প্রাতভ্রমণে বের হন। তবে অনেকক্ষণ না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে। পরে সমীর নামে প্রোমোটারের ফ্ল্যাটের সামনে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হন লক্ষ্মী। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, অ্যাসিড খাওয়ার দরুণ মৃত্যু হয়েছে ওই গৃহবধূর।
তবে এই বিষয়টি আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে কোনও রহস্য রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। তবে গৃহবধুর পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, যদি আত্মহত্যা হত তাহলে রাস্তায় গিয়ে কেন করতেন তিনি? জায়গা আত্মসাতের জন্য সমীর এবং বাকি ব্যক্তিরা মিলে লক্ষ্মী দেবীকে অ্যাসিড খাইয়ে খুন করেছে। ইতিমধ্যে ওই তিন ব্যক্তিকে হরিদেবপুর থানা পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসা করছে।
মৃতের এক আত্মীয় জানান যে, মর্নিং ওয়াক থেকে অনেকক্ষণ বেরিয়েছিল। তবে ফিরে আসেননি। সেই কারণে চিন্তা হচ্ছিল। পরে অজ্ঞান অবস্থায় পাই ওকে। ও আত্মহত্যা করেইনি। খুন করা হয়েছে।