কাশীপুর: মেরেকেটে সাত বছর বয়স। কথা ওতটাও স্পষ্ট হয়নি এখনও। আধো আধো বুলি। আর এতটাই ভয় গেঁথেছে মনে, বাবার কোলে থেকেও কেঁপে উঠছে মাঝেমধ্যেই। সাত বছরের বাচ্চাটা তার চোখের সামনে ‘বোনু’কে খুন হতে দেখেছে। তার বোনের বয়স চার বছর। জেঠিমা ‘বোনু’কে ডেকেছিল। তারপর হঠাৎই মুখে কাপড় গুঁজে দেয়, আর কলাগাছ দিয়ে চেপে ধরে… কথাগুলো বলতে বলতে সাত বছরের বাচ্চা ছেলেটা থেমে যাচ্ছিল, তার ‘বোনু’র সঙ্গে যা হয়েছে, তা তার সঙ্গে হবে না তো! শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুরে ঘটেছে একটি মর্মান্তিক ঘটনা। চার বছরের এক শিশুকন্যাকে খুন করে পুকুরে পাঁকে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেঠিমা ও জেঠুর বিরুদ্ধে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শিউরে উঠেছে গোটা বাংলা। উঠছে অপরাধীর মনন নিয়েও প্রশ্ন!
বাবার সঙ্গে জেঠুর ঝামেলা, বাড়ির একটা জমি, জেঠিমার সঙ্গে মায়ের নিত্য অশান্তি নিয়ে এতটুকুও ভাবিত ছিল না ছোট মনগুলো। তারা জানত জেঠু-জেঠিমা তাদেরই লোক। তার বাড়ির উঠোন, তাদেরও খেলার জায়গা। প্রসাদ খাওয়ার নামে ডেকেছিল জেঠিমা। চার বছরের বাচ্চাটা কী কখনও ভেবেছিল, সেখানেই মরণ তার জন্য অপেক্ষা করছে। জেঠিমার কথায় ঘরে ঢুকেছিল বাচ্চাটা। ভাগ্যিস খেলতে খেলতে তার পিছু নিয়েছিল দাদাও। কিন্তু দাদার পা থমকে গিয়েছিল দোরগোড়াতেই। জেঠিমা তখন যে বোনুর মুখে কাপড় গুঁজে দিয়েছে। কলাগাছ দিয়ে চেপে ধরেছে।
বোনের ছোট্ট শরীরটা আপ্রাণ প্রয়াস চালাচ্ছিল সেই ফাঁস ছাড়ানোর। পারেনি। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল ‘বোনু’। সাত বছরের বাচ্চাটার মুখ থেকে ‘জেঠিমা’ ডাকটা আর বের হয়নি। ‘বোনু…’ বলতেই জেঠিমার রক্তচক্ষু দেখেছিল ছেলে। তাকেও শাসানো হয়েছিল, ‘বলবি তো তোর অবস্থাও বোনুর মতো হবে।’
এক সাত বছরের বাচ্চাকে শুনতে হয়েছে ‘মৃত্যুর হুমকি’। সবেমাত্র বোনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের একমাত্র সাক্ষী সে। বাচ্চাটা সিঁটিয়ে গিয়েছিল। পরে যখন বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল, মা কান্নায় ভেঙে পড়েছে, বাবা পাগলের মতো ছুটে বেরিয়েছে, তখনও খাটের কোণায় ঘাপটি মেরে বসেছিল বাচ্চাটা। বাড়ির সামনে পুকুরের পাঁক থেকে উদ্ধার হয়েছে বোনের দেহ। পাড়াশুদ্ধ তোলপাড়। বাচ্চাটা তখনও নিশ্চুপ। পরে যখন ‘পুলিশ কাকুরা’ এল, এগিয়ে এসেছিল বাচ্চাটা। পুলিশ তখন বাড়ির লোক, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলছিল। পুলিশের চোখ পড়ে বাচ্চাটার দিকে। নির্বাক দৃষ্টি যেন বলে দিয়েছিল অনেক কিছুই। দুঁদে কর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন, কিছু বলতে চায় বাচ্চাটা। বাচ্চাটা বলল, যা বলল… তাতে শিউরে উঠতে হয়। বাচ্চাটার কথায়, “আমার বোনুকে মেরে…তারপর গলার মধ্যে কলা গাছ চেপে… বাড়ি আসতে চাইছিল ও…আমি দেখে চিল্লাছিলাম… আমাকে বলল (কথাটা জড়িয়ে গেল বাচ্চাটার) বলল বাড়ির কাউকে বলবি না, তাহলে তোকেও তোর বোনের মতো করব। শাড়ি মুখে দিয়ে মেরে দিল বোনুকে। আমি চেঁচাচ্ছিলাম তো, আমাকে ওরকম বলে দিল…” বাচ্চাটা তখনও গলা জড়িয়ে বাবার কোলে।
#Watch: দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুরে মর্মান্তিক ঘটনা। চার বছরের এক শিশুকন্যাকে খুন করে পুকুরে পাঁকে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেঠিমা ও জ্যেঠুর বিরুদ্ধে। চোখের সামনে ‘বোনু’কে খুন হতে দেখেছে ভাই। নিজের মুখে জানাল সেই কথাই।
WATCH LIVE: https://t.co/gXqO63iLKd#ViralAudio | #Kashipur pic.twitter.com/A02lyH15qN
— TV9 Bangla (@Tv9_Bangla) June 24, 2023
ছেলের মুখে তার বাবা শুনলেন মেয়েকে খুনের বর্ণনা। আর ‘খুনি’ তাঁরই বৌদি! বাচ্চাটার প্রতিটা শব্দ মনে আবারও প্রশ্ন জাগাল মানুষ বিশ্বাস করবে কাকে!