দক্ষিণ ২৪ পরগনা: টানা ছয়দিন পর মিলেছে সাফল্য। ধরা দিয়েছে কুলতলির রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)। বাঘটিকে খাঁচাবন্দি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বনী ক্যাম্পের দিকে। জলপথেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। সূত্রের খবর, বনী ক্যাম্পে বাঘটির চিকিৎসা করার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে ঢুলিভাসানির জঙ্গলে। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা হয়েছিল বাঘটিকে। জলপথে নিয়ে যাওয়ার পথে মাঝনদীতেই সংজ্ঞা ফিরে পায় ডোরাকাটা।
বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাঘটির বয়স আনুমানিক ৮ থেকে ১০ বছর। পূর্ণবয়স্ক ওই পুরুষ বাঘটির আপাতভাবে কোনও অসুস্থতা নেই। তবে, একাধিকবার সে খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাই কিছু আঁচড় বা হালকা চোট পেলেও পেতে পারে ওই ডোরাকাটা। আপাতত বাঘটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ডোরাকাটার তদারকিতে কোনও কসুর করছেন না বনদফতরের কর্মীরা। সর্বক্ষণ দুই পশু চিকিৎসক তাকে নজরে রাখছে। যদিও এখনও অভুক্ত রয়েছে বাঘটি।
বনদফতর সূত্রে খবর, কালো কাপড় ও প্লাস্টিকে খাঁচা মুড়ে ফেলার পর ঢালু জায়গা থেকে বাঘটিকে নৌকোয় তোলা হয়েছে। জলপথেই ঝড়খালির বন্যপশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। সূত্রের খবর, বাঘ-সহ খাঁচা তুলতে গিয়ে আহত এক বন সহায়ক কর্মী। মঙ্গল সামন্ত নামে ওই কর্মী ১৪ জনের একটি বিশেষ টিমের সদস্য। ওই বিশেষ প্রতিনিধি দল বাঘ ধরতে কুলতুলির মৈপীঠ উপকূল থানা এলাকা থেকে পিয়ালির কেল্লা এলাকায় আসেন। মঙ্গলবার সকালে, বাঘটিকে খাঁচায় ভরার পরে নৌকায় তোলার সময় পড়ে গিয়ে আহন হন মঙ্গল। তবে, প্রাথমিক চিকিৎসার পর আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানিয়েছে বনদফতর।
বাঘ ধরতে কী কী পদক্ষেপ বনদফতরের?
পটকা, লঙ্কাবোমা, দমকলের মাধ্যমে জল ছেটানো। কুলতলির দক্ষিণরায়কে পাকড়াও করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি বনদফতরের কর্মীরা। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন পশুচিকিৎসক। বাঘটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে কাবু করা হয়। কিছু সময় পড়ে বাঘটি সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে পড়লেই চিকিৎসক ও বনদফতরের উচ্চপদস্থ কর্মীরা পরীক্ষা করবেন।
বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘটিকে কাবু করতে দুটি ঘুমপাড়ানি গুলি করা হয়েছে। গুলি করার কিছুসময় পরেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে বাঘটি। পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে গেলে ডোরাকাটাকে পরীক্ষা করতে যান পশু চিকিৎসক ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মীরা। বাঘটির স্বাস্থ্য় পরীক্ষা করা হয়। পিয়ালি নদীর পাড় থেকেই পাকড়াও করা হয়েছে বাঘটিকে।
প্রথমে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে বাঘটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসে। তবে পুনরায় তাকে খাঁচায় পুরে ফেলা হয়। খাঁচাবন্দি করার পরেই নৌকায় তোলা হয় বাঘটিকে।
কী বলছেন বনমন্ত্রী?
ঘটনায় বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমি বনদফতরের সকল কর্মীদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। বাঘটিকে এখন কাবু করার পর তাকে খেতে দেওয়া হবে। কারণ, পাঁচদিন ধরে বাঘটা খায়নি। তারপর তার পা, লেজ, মুখ, দাঁত পরীক্ষা করে দেখা হবে কোথাও কোনও আঘাত পেয়েছে কি না। এক একটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ওজনে একটু বেশিই হয়। অন্তত ২০০ কেজি তো বটেই। বনদফতরকে সত্যিই অভিনন্দন। গ্রামবাসীদের অবশেষে স্বস্তি।”
বাঘে-মানুষে মুখোমুখি
গত পাঁচদিনে ধরা দেয়নি দক্ষিণ রায়। কুলতলির রয়্যাল বেঙ্গলকে পাকড়াও করতে শেষে আসরে নামে দমকল। হোসপাইপ দিয়ে শুরু হয় জল দেওয়া। বনদফতর সূত্রে খবর, এর আগে বাঘ ধরতে কখনও এভাবে দমকলকে ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু বাধ্য হয়েই অবশেষে আসরে নামে দমকল। মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, হোসপাইপ দিয়ে জঙ্গলের ভেতর জল দেওয়া হয়েছে। তারপর বাঘের অবস্থান বুঝতে পেরে গুলি চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার দর্শন গায়েনের চকে ছিল বাঘটি। শুক্রবার ৫ নম্বর গরাণকাটির কাছে চলে যায়। শনিবার বিকালে চলে যায় পিয়ালির জঙ্গলে। জাল দিয়ে জঙ্গল ঘিরছিলেন বনকর্মীরা। তার মধ্যেই গর্জন শুনে এগিয়ে যান গ্রামবাসীরা। বাঘের হানা থেকে বাঁচতে গিয়ে জখম হন এক গ্রামবাসী। তিনদিন ধরে কুলতলির লোকালয়ের কাছে ছিল ওই বাঘ। অবশেষে টানা ছয়দিন পর ধরা পড়ল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।