দক্ষিণ ২৪ পরগনা: লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ৫০০ টাকা পাওয়ার আগেই অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও ৮হাজার টাকা! সরকারি প্রকল্পের (Laxmi Bhandar) নাম করে টাকা ভাঙিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ভাঙড়ে। অভিযোগকারী গৃহবধূ সাবেরা বিবি জানিয়েছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নামে ফোন করে তাঁকে প্রতারিত করা হয়।
ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া গ্রামের গৃহবধূ সাবেরা বিবির অভিযোগ, সম্প্রতি তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। সেই ফোনকলে এক যুবক জানান তিনি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের (Laxmi Bhandar) তরফে সরকারি প্রতিনিধি। সাবেরা বিবির নাম জমা পড়েছে। সেই মোতাবেক তাঁকে বিশেষ স্কিমে এককালীন ১৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু, বদলে তাঁকে স্থানীয় রিচার্জের দোকানে গিয়ে কিছু পরিমাণ টাকা অনলাইনে পাঠাতে হবে। কিন্তু দোকানদার আচমকা কেন টাকা পাঠাতে রাজি হবেন? সেক্ষেত্রে কীভাবে টাকা পাওয়া যাবে তা নিয়েও ফোনেই নির্দেশ দেয় ওই যুবক। দোকানদারও টাকা পাঠিয়ে দেয়। তারপরেই মাথায় হাত! সাবেরা বুঝতে পারেন তাঁকে প্রতারিত করা হয়েছে।
সাবেরার কথায়, “আমায় একটি ছেলে ফোন করে বলে সে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে আমায় ১৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে। তারজন্য আমায় অনলাইনে কিছু টাকা পাঠাতে হবে। তারপরেই আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকবে। সেই মতো আমি রিচার্জের দোকানে যাই। সেখানে গিয়ে বলি অনলাইনে ৮ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিতে। বলি, যে আমার ছেলে বাইরে থাকে। ও ফোনে রয়েছে। ওর কিছু টাকার দরকার। ৮ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিন। দোকানদারও টাকা পাঠিয়ে আমার থেকে পাল্টা টাকা চায়। আমি আমার ১৬ হাজার টাকা চাইতেই দোকানদার বলে এমন কোনও টাকা ঢোকেনি। তখনই বুঝতে পারি আমায় ঠকানো হয়েছে।”
যে দোকানদার টাকা পাঠিয়েছিলেন তিনি বলেন, “আমার কাছে এসে ওই মহিলা বলেন তাঁর ছেলের নাকি টাকার দরকার। তাই অনলাইনে টাকা দিতে। আমি বারবার জিজ্ঞেস করেছি ওঁরই ছেলেকে টাকা পাঠানো হচ্ছে কি না। তাতে বলেন যে ফোনের ওপারের যুবক তাঁরই ছেলে। আমিও তাই টাকা পাঠিয়ে দিই। তারপরে মহিলা আমার থেকে পাল্টা টাকা চান। বলেন, তাঁর ছেলে নাকি ১৬ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু, সেই টাকা যে আসেনি তা দেখাই। তখন আমায় জানায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য নাকি তিনি ১৬ হাজার টাকা পেতেন। তার বদলে দিতে হয়েছে ৮ হাজার টাকা। সঙ্গে সঙ্গে আমি কাশীপুর থানায় খবর পাঠাই।” কাশীপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ (Laxmi Bhandar) প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’ এই প্রথম নয়। সরকারিভাবে প্রকল্প চালু হওয়ার কথা ঘোষণার পর থেকেই ধূপগুড়ি, মালদা-সহ একাধিক এলাকায় এই দুর্নীতির ছবি সামনে এসেছে। এমনকী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম তুলতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়েছেন এই ছবিও ধরা পড়েছে। কোথাও বা প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগও সামনে এসেছে। সম্প্রতি, বিজেপি রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেছেন, “বাংলার মানুষকে ভিখারি বানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫০০ টাকার জন্য মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। মারপিট করছে। পদপিষ্ট হচ্ছে।”
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম নিয়ে যাতে কোনওরকম দুর্নীতি না হয় সে প্রসঙ্গে আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনভাবেই সেই ফর্ম ফোটোকপি করা যাবে না একথাও জানিয়েছিলেন মমতা। প্রত্য়েক ফর্মে নির্দিষ্টি ইউনিক কোড থাকবে। সেই ইউনিক কোড প্রত্যেক ফর্মের ক্ষেত্রে আলাদা হবে। পাশাপাশি, গ্রাহকদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও থাকতে হবে তবেই মিলবে ফর্ম এমনই নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির একাধিক ছবি সামনে আসায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। সরকারি কর্মচারি ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: Jitendra Tiwari: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরেছে মোদী-পদ্মের ছবি, জিতেন্দ্রর গতিপ্রকৃতিতে জল্পনা!
আরও পড়ুন: Babul Supriyo: ‘বিলম্বিত বোধোদয়’, কটাক্ষ হেনেই বাবুলকে স্বাগত সমবায় মন্ত্রীর