দক্ষিণ ২৪ পরগনা: এক যুগ আগের ঘটনা। আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল মা। আর ফেরেনি। দিন গিয়েছে, রাত কেটেছে, আবার ভোর হয়েছে! আট বছরের ছোট্ট ছেলে মাকে খুঁজেছে পাগলের মতো। ১২ বছর ধরে হন্যে হয়ে খুঁজেছে সে। অবশেষে তার সেই অপেক্ষার মুক্তি হল। ফিরে পেল মায়ের কোল। ফিরিয়ে দিল ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর এই ঘটনায় সূত্রধরের কাজটা করল হ্যাম রেডিয়ো।
নদিয়ার চাকদহের বল্লভপুরের বাসিন্দা জ্যোতি সরকার। বয়স ৫২। বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যান ছেলে মিঠুন সরকার। এতগুলো বছর পর মাকে ফিরে পেয়ে ছেলের সে কী কান্না! মায়ের গলা জড়িয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল মিঠুন। ওদিকে মা-ও ছেলেকে ফিরে পেয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছেন। হাউ হাউ করে কাঁদছে দু’জনই। এক যুগ পর আপনজনকে পেয়ে আনন্দ-আবেগ যেন মিলেমিশে গিয়েছে জ্যোতিদেবীর।
মিঠুনের বয়স তখন আট বছর। বাবা মনোরঞ্জন সরকারের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি জ্যোতিদেবী। পুলিশ সূত্রে খবর, ক্রমশ মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন তিনি। ক্রমেই মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন। ১২ বছর আগে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ ছিল না তাঁর।
এরপর গত ১৩ অগস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে এক পথদুর্ঘটনা ঘটে। এক মহিলা দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। একাই ছিলেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। পরদিনই তাঁকে ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতালের সহকারী সুপার সুপ্রিম সাহা তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন বাড়ির লোকজনকে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। সে ভাবে কিছু বলতেও পারছিলেন না।
তখন তিনি রাস্তায় ভিক্ষা করেন। এরপরই সময় নষ্ট না করে হ্যাম রেডিয়োতে যোগাযোগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হ্যাম রেডিয়োর সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর মহিলার পরিচয় জানতে পারেন। যোগাযোগ করা হয় তাঁর ছেলে মিঠুন সরকারের সঙ্গে। পেশায় গাড়ি চালক মিঠুন মাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বৃহস্পতিবার নিজেই গাড়ি চালিয়ে ডায়মন্ড হারবারে চলে যান। এদিন সন্ধে ৮টা নাগাদ জ্যোতিদেবীকে ছেলের হাতে তুলে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছেলেকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা-ও। সে এক আবেগঘন দৃশ্য। মা-ছেলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সে কী কান্না! পরে একে অপরের চোখ মুছিয়ে ফিরে যান বাড়ির পথে। আরও পড়ুন: ‘তিন চারটে বাচ্চা, স্বামী ঘরে, তবু আমার ছেলের সঙ্গে প্রেম করত! আজ ছেলেটাকে কুপিয়ে শেষ করে দিল…’