দক্ষিণ ২৪ পরগনা: গাড়ির বোনেটে বসে পুলিশ অফিসার। রিকশা চালকরা এসে প্রতিদিন তাঁদের তোলা দিয়ে যান। এভাবেই নাকি গত এক বছর ধরে তোলায় আদায় করছে পুলিশ। রোজ রোজ এভাবে ঘুষ দিতে দিতে ক্ষুব্ধ রিকশা চালকরা। অবশেষে ভাঙল ধৈর্যের বাঁধ। বাসন্তী হাইওয়েতে ফিল্মি কায়দায় গাড়ির উপর বসে রিকশা চালকদের কাছে থেকে টাকা তোলার প্রেক্ষিতে সরব হলেন তাঁরা। কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উগরে দিলেন শতাধিক রিকশা চালক।
প্রতিদিন ভোরবেলা বাসন্তী হাইওয়ের পুলিশের তোলাবাজি ও জুলুমবাজিতে অতিষ্ঠ তাঁরা। সেই যন্ত্রণার শিকার ইঞ্জিন ভ্যান চালক থেকে রিকশা চালক। ভোর বেলা থেকে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সে থানার নাইট ডিউটিতে থাকা পুলিশ কর্মীরা ইঞ্জিন ভ্যান চালকদের কাছ থেকে ২০ টাকা ৪০ টাকা, কখনও বা ৫০ টাকা করে তোলা তুলছে বলে অভিযোগ। কিন্তু কেন টাকা দিতে হবে? সেই প্রশ্নের নাকি উত্তর পাওয়া যায় না পুলিশের থেকে। অবশেষে পুলিশের এই তোলাবাজির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁরা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যেই চলছে পুলিশের তোলাবাজি। ইঞ্জিনভ্যান চালকদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তোলা আদায় করছে পুলিশ। আর পুলিশ গাড়ির বোনেটে ফিল্মি কায়দায় বসে পুলিশ অফিসার। প্রথমে ছবি তুলতে গেলে বাধা দেওয়া হয় চিত্র সাংবাদিককে। এদিকে পুলিশ কী কারণে টাকা নিচ্ছে জিজ্ঞেস করলে, এক অফিসার জানালেন ইঞ্জিন ভ্যান চালক নাকি তাঁকে প্রতিদিনই এমনিই কুড়ি টাকা করে দিয়ে যান। এ কেমন ব্যাখ্যা?
যদিও ইঞ্জিন ভ্যান চালকদের অভিযোগ, পুলিশ জোর করেই তাঁদের কাছ থেকে তোলা আদায় করে। কেউ যদি তোলা না দিয়ে পালিয়ে যান তাঁকে বাইক নিয়ে তাড়া করে পুলিশ তোলা আদায় করে। কখনও লেদার কমপ্লেক্সের ভিতরে আবার কখনও লেদার কমপ্লেক্সের বাইরে, একাধিক জায়গাতে তোলা আদায় করে চলেছে পুলিশ। ফলে সমস্যায় পড়ছে রিকশা চালকরা। তাঁদের প্রশ্ন, “রোজ যদি ৫০ টাকা পুলিশকেই দিতে হয়, আমরা রোজগার করব কী, আর বাড়িতে নিয়ে যাব কী?”
এক রিকশা চালক পুলিশ অফিসারের সামমেই বললেন, “করেকম্মে খাই। দু-পাঁচ টাকা ইনকাম হয়। তাতে আবার পুলিশকে রোজ তোলা দিতে হয়।” আপরেকজনের কথায়, “ভ্যান চালিয়ে খাই। পুলিশ পয়সা নিচ্ছে। ঘুষ না দিলে মাল নিয়ে রাস্তা পেরতে দেয় না। গত লকডাউন থেকে চলছে এরকম।” তাঁর সঙ্গী আরেক রিকশা চালক বলেন, “লকডাউন থেকে শুরু হয়েছে। ৫০ টাকা করে না দিলে মাল নিয়ে যেতে দেয় না। বলে, এটা অন্যায়! ১৫-২০ বছর ধরে লেদার কমপ্লেক্সের কাজ করি। প্রত্যেকদিন টাকা দিতে হবে বলে এরা। একদিন আমার ছেলে ২০ টাকা দেওয়ায় তার হাতে মেরেছে!”
এদিকে এ নিয়ে কর্তব্যরত এক পুলিশকে জিজ্ঞাসা করতে ভাবলেশহীন মুখে তাঁর ব্যাখ্যা, ”এমনই দিয়ে যায় এরা। ব্যাস…”
আরও পড়ুন: Adhir Chowdhury: ‘সনিয়াই মমতার বিরুদ্ধে ভবানীপুরে প্রার্থী দিতে দেননি, সেই কংগ্রেসকেই আক্রমণ!’