সন্দেশখালি: তপ্ত সন্দেশখালি। বৃহস্পতিবার হাজার হাজার আদিবাসী মহিলার বিক্ষোভের পর শুক্রবার আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি। পুড়ছে শিবু হাজরার পোলট্রি ফার্মের একের পর এক ঘর, বাগানবাড়ি। বিক্ষুব্ধ আদিবাসী মহিলারা প্রতিবাদের আগুন ধরিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। শেখ শাহজাহানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়েছে থানায়। আবার পাল্টা শিবু হাজরার তরফ থেকে থানাতে জমা পড়েছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগও। মাছের ভেড়ির মালিক সুশান্ত সর্দারকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ভেড়ির আরেক মালিক সুদীপ্ত জাগুলিয়াকে মারধরের অভিযোগ করেছেন শিবু হাজরা। সম্পত্তি নষ্টের পাশাপাশি ৫০ লক্ষ টাকা খোয়া যাওয়ারও অভিযোগ করেছেন তিনি।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, শিবু হাজরা অভিযোগ করতেই গ্রামবাসীদের ১১১ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, খুনের চেষ্টা, চুরি, বেআইনি জমায়েত, অগ্নি সংযোগের মতো ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। কিন্তু গ্রামবাসীদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, সরবেড়িয়ায় ইডি আধিকারিক, CRPF এর ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ মামলা রুজু করেনি কেন? কোথায় ছিল তৎপরতা? এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান।
শাসক নেতা শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারের গ্রেফতারির দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে দফায় দফায় তপ্ত হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি। গ্রামবাসীরা কার্যত খড়্গহস্ত! গ্রামবাসীদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের বাড়ির সামনে দেখা যাচ্ছে শাসক নেতাদের। একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। আর তা নিয়েই শোরগোল। যদিও, সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি TV9 বাংলা।
ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বিডিও অফিস থেকে খানিক দূরেই আন্দোলনকারীদের একজনের বাড়ি। সেখানেই জমা হয়েছিলেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। তৃণমূলের ব্লক অফিস কার্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে বৃহস্পতিবার মিছিল হয়। স্লোগান ওঠে, জ্বলে প্রতিবাদের আগুন। অভিযোগ উঠছে, ওই এলাকারই একজনের বাড়ি থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে আন্দোলনকারীদের বাড়িতে চড়াও হয় তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। এই ঘটনায় মুখ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। পাল্টা আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশ বরাবরই শাসকনেতাদের কথাতেই ওঠেবসে। ১৩ বছর ধরে এত অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়েও নিষ্ক্রিয় পুলিশ। এক আন্দোলনকারী বলেন, “পুলিশ কী করবে? আমাদের হাতে ওদের ছেড়ে দিক। এতদিন ধরে তো পুলিশ কী করল দেখা আছে।” সন্দেশখালির সাধারণ বাসিন্দা ওঁরা। তাঁদেরই একজন বৃদ্ধা বলেন, “আমাদের মারে কেন ওঁ? ওঁ নাকি নেতা! নেতারা মারে? আমাদের তো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।” আরেক যুবক বললেন, “আমরা চাই শিবু হাজরা, শেখ শাহাজাহানের গ্রেফতার। কিন্তু পুলিশ তো আমাদেরই ধরবে। নেতাদের কী ধরবে? নেতাদের কথাতেই তো চলে ওরা? ”
পুলিশের অবশ্য একটাই বক্তব্য, “তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এত ডিটেইলস বলা যাবে না। যা বলবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবে।” আর সন্দেশখালি প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানকে খুঁজতে খুঁজতে না তাজমহলে পৌঁছে যায়! সন্দেশখালি একদিন মানুষ ভুলে যাবে।”