Sundarban Royal Bengal Tiger: ‘সে যে চমকে বেড়ায়, দৃষ্টি এড়ায়’…৪৮ ঘণ্টা পেরলেও খাঁচায় ধরা দিল না ‘পাঁকাল’ বাঘ!
South 24 Pargana: বনকর্মীদের আরও অনুমান, গোসাবার ওই বাঘ এখন পেতে রাখা খাঁচার ঘেরাটোপের বাইরে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: এ যেন ‘ছু কিত কিত’ খেলা! কিছুতেই নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না গোসাবার ‘পাঁকাল’ বাঘের। খাঁচার ভিতরে রয়েছে নধর টোপ। ছাগল। মিত্রবাড়ি তে পাতা দু-দুটি খাঁচার সামনে ঘোরাঘুরি করলেও টোপের লোভ সামলে শনিবার রাতের অন্ধকারেই ফের উধাও বাঘ (Royal Bengal Tiger)! গ্রামবাসীরা বলছেন বাঘটি লাহিড়িপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরঘেরি এলাকায় চলে এসেছে।
আর এতেই বিষম বিপদ দেখছেন বনকর্মীরা। কারণ, বাঘ যদি এভাবে এভাবে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করে, তাহলে তাকে পাকড়াও করতে মুশকিল হবে। কেউ বলছেন ধুর্ত! কেউ বলছেন, অসম্ভব বুদ্ধিমান। কারোর মতে এতো ক্ষিপ্র-আক্রমণাত্মক রয়্যাল বেঙ্গল আগে দেখেননি। বনদফতরের আধিকারিক থেকে বাঘ ধরতে ওস্তাদ মানুষগুলির মত এমনই। বনকর্মীদের আরও অনুমান, গোসাবার ওই বাঘ এখন পেতে রাখা খাঁচার ঘেরাটোপের বাইরে।
স্থানীয় এক গ্রামবাসীর কথায়, “যতদূর দেখে মনে হচ্ছে, বাঘটা এখন লাহিড়িপুরে এসে গিয়েছে। পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে। চরখেলির মধ্যে যদি এভাবে বাঘ ঘোরাফেরা করে তবে তা আশঙ্কার। যেকোনও সময়ে আমাদের বড় বিপদ হতে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাঘটিকে ধরে ফেলুক বনদফতর।”
পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বাঘের হামলায় জখম হয়েছেন সজনেখালি বিটের অফিসার পার্থ হালদার। তাঁকে স্পিড বোটে গোসাবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গোসাবার গ্লাসখালি ও এমলিবাড়ি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে বাঘের খোঁজে তল্লাশি চালাতে শুরু করেন বনকর্মীরা। সেই দলে ছিলেন বিট অফিসার পার্থ হালদারও। সেসময়ই আচমকা বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে। থাবা লাগে তাঁর গায়ে। আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে ওঠার আগেই পার্থর শরীরের মাংস খুবলে নিয়ে পালিয়ে যায় বাঘ।
শুক্রবার বাঘটি ছিল চরঘেরি এলাকায়। সেখান থেকে চার কিলোমিটার দূরে গ্লাসখালি ও এমলিবাড়ি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে বাঘটিকে শনিবার সকালে দেখতে পাওয়া যায়। সাতজেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক জায়গায় গ্রামবাসীরা বাঘের পায়ের টাটকা ছাপ দেখতে পেয়েছেন বলে জানান। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বন কর্মীরা।
বন দফতর গ্রামের দিকে নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন। যাতে নদী সাঁতরে আবার নিজের জঙ্গলে ফেরত যেতে পারে বাঘটি, সেই ব্যবস্থা করা হয়। সজনেখালি, বসিরহাট রেঞ্জের সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আরও বন কর্মীরা সেখানে চলে যান। ছিলেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ ক্ষেত্র অধিকর্তা জোন্স জাস্টিন। সকালে আবার অন্যত্র দেখা যায় বাঘের পায়ের ছাপ।
শনিবার রাতের মধ্যে বনকর্মীরা একরকম নিশ্চিত হয়ে যান বাঘ রয়েছে সাতজেলিয়ার ৪ নম্বর মিত্র বাড়ির কাছেই। সেইমতো জাল ফেলা হয়। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা! শনিবার সারারাতেও ধরা দিল না বাঘ। রবিবার সকালে দেখা যায়, ফের নিজের স্থান পরিবর্তন করে আগের ডেরায় ফিরে এসেছে সে।
সপ্তাহ খানেকও পেরোয়নি। ৬ দিন ধরে বাঘবন্দির খেলার সাক্ষী ছিলেন সুন্দরবনবাসী। বাঘকে ধরতে গিয়ে গত ছ’দিনে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি বনকর্মীদের। ট্রাঙ্কুলাইজার নিয়ে বনকর্মীদের অভিযান, পিয়ালি নদী থেকে দমকলকর্মীদের জল স্প্রে, জঙ্গলে লঙ্কা বোমা নিক্ষেপ- কী না করা হয়েছে! কিন্তু বাঘ ছিল তার নিজের অবস্থানেই। বন দফতরের কর্মীরা তাকে নাগালে পাননি। শোনা যাচ্ছিল তার গর্জন, চোখে পড়ছিল পায়ের ছাপ, শুধু দেখা দিচ্ছিল না সে-ই।
কয়েকদিন ধরে অভুক্ত ছিল বাঘটি। তাই সে যেখানে ছিল, সেখান থেকে বের হচ্ছিল না। বাঘটির দেখা মিলতেই পরপর দুটি ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। গুলি করার কিছুসময় পরেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে বাঘটি। পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে গেলে ডোরাকাটাকে পরীক্ষা করতে যান পশু চিকিৎসক ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মীরা।
গত বুধবার সাতসকালে বনদফতরের তরফে রামগঙ্গা রেঞ্জের অন্তর্গত ঢুলিভাসানি ৪ নম্বর জঙ্গলেরামগঙ্গা রেঞ্জের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয় কুলতলির লোকালয়ে চলে আসা চালা বাঘটিকে।