দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বারেবারে লোকালয়ে সুন্দরবন থেকে বাঘ চলে আসায় ত্রস্ত সুন্দরবনবাসী। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক বার লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে বাঘ। পরিবেশবিদরা বলছেন, ফেন্সিং নেট ছিঁড়ে ফেলাতেই এই বিপত্তি। এবার বাঘ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিতে নদীর পাড়ে লাগানো হয়েছিল নাইলনের জাল। যাতে বাঘ সহজেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে নদী সাঁতরে গ্রামে ঢুকে না আসতে পারে।
এর আগে নাইলনের জাল লাগানোর পর থেকেই খুব ভালো সুফল মিলেছিল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বন বিভাগের। যে কারণে গোসাবা, বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালি কিংবা কুলতলীর বিস্তীর্ণ গ্রামগুলোতে বাঘের আনাগোনা বেশ অনেকটাই কমে গিয়েছিল বলা যেতে পারেl কিন্তু সাম্প্রতিককালে আবারও নতুন করে বাঘের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। একেবারে সরাসরি জঙ্গল থেকে বাঘ ঢুকে পড়ছে কুলতলি, গোসাবা কিংবা বাসন্তীর ঝড়খালি এলাকায়।
বারবার লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন গ্রামবাসীরা। lযার ফলে উদ্বেগ বাড়ছে বনদফতরের কর্তাব্যক্তিদেরl দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন জায়গাতেই চোরাপথে যে সমস্ত মৎস্যজীবী সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরার জন্য যাচ্ছেন, তাঁরাই একেবারে নাইলনের জাল কেটে ঢুকে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনদফতরের এত কর্মী নেই যে, তাঁদের পক্ষে গোটা এলাকার ফেন্সিংয়ের ওপর নজর রাখা সম্ভব হবে। তার ফলে সেই কাটা জালের অংশ থেকেই মাঝেমধ্যেই সুন্দরবনের বাঘ বেরিয়ে নদী সাঁতরে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। সুন্দরবনের বাঘকে লোকালয়ে আসা আটকাতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে বনদফতর l ইতিমধ্যেই বন দফতরের রায়দিঘি রেঞ্জের অন্তর্গত কুলতলি বিট এলাকায় যে সমস্ত গ্রাম সংলগ্ন বাঘের জঙ্গল রয়েছে, সেখানে জাল মেরামতির কাজে হাত লাগানো হয়েছে।
এই জাল কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই করতে হয় তাঁদের। এমনিতেই প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের নদীতে নৌকা কিংবা বোটে থেকে বাঘের আনাগোনার ওপর নজরদারি চালান বনকর্মীরাl কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক বন কর্মী না থাকায় বিস্তীর্ণ এলাকায় দিনে ও রাতে সমানতালে নজরদারি দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েl তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকলে সমস্যা আরও বাড়েl সুন্দরবন এলাকায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বনবিভাগের পাশাপাশি সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকাতেও এবার জোর কদমে শুরু হবে কাটা জাল চিহ্নিত করার পর্ব। সেখানেও একইভাবে জাল মেরামতির কাজ করা হবেl সেই সঙ্গে যে সমস্ত মৎস্যজীবীরা কাঁকড়া ধরার জন্য ফেন্সিং কাটতে উদ্যত হন, তাঁদের সচেতন করা হবে বনদফতরের পক্ষ থেকে।
বন্য প্রাণ বিশেষজ্ঞ নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “একবার দেখছি অল্প বয়স্ক বাঘ বের হচ্ছে, একবার বয়স্ক। দুই ক্ষেত্রেই টেরিটোরিয়াল প্রবলেম হচ্ছে। কোথাও একটা সমস্যা তো হচ্ছেই। তার সঙ্গে সঙ্গে ফেন্সিং কেটে ঢুকে পড়া, তাতেও সমস্যা হচ্ছে। আমাদের বনদফতরে যা স্টাফ রয়েছে, তাতে সর্বদা সব ফেন্সিং চেক করার সম্ভব নয়। গ্রামবাসীদেরই আরও বেশি সচেতন হতে হবে।”