ডায়মন্ডহারবার: “নিচু তলার জমি শক্ত করুন জোটের কথা পরে ভাবা যাবে।” ঠিক এমনই বার্তা শোনা গেল সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর গলায়।
আজ বিকেলে ডায়মন্ড হারবারের স্টেশন মোড়ে দলের এরিয়া কমিটির দ্বিতীয় সম্মেলন হয়। সেই সন্মেলনে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে সূর্যবাবু বলেন, “দিল্লিতে কৃষকরা যদি লড়াই আন্দোলন করে দেখাতে পারে, তাহলে এরাজ্যে আমরা কেন পারব না ? এক বছর ধরে দিল্লিকে ঘেরাও করে রেখে যদি অবরুদ্ধ করা হতে পারে, কলকাতাতে কেন নয়। কৃষকরা যা দাবি করেছিলেন মন্ত্রিসভায় তা প্রত্যাহার করা হবে, তবুও কৃষক আন্দোলন থেমে থাকবে না। কারণ, প্রথমত বিলটা পার্লামেন্টে পাস হতে হবে। আমরা এদের থেকে আগে অনেক কথা শুনেছি, তাই খেয়ে না আঁচালে এদের বিশ্বাস নেই।”
এরপর কেন্দ্রীয় ও রাজ্যসরকারকে একযোগে আক্রমণ করে সিপিআই(এম) নেতা বলেন, “মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে দেশে কোনও গণতন্ত্র নেই। আর মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যে কোনও গণতন্ত্র নেই। কোথাও বিরোধীরা লড়তে পারবে না, আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে। কিন্তু পারবে, একদিন পারবে। বারে বারে ঘুঘু ধান খেয়ে যেতে পারে। কিন্তু ঘুঘুরও একদিন আসবে, সেই মানুষও আবার ঘুরে দাঁড়াবে।”
এরপর তিনি বলেন, “আক্রমণ হচ্ছে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মিটিং-মিছিল আটকাতে পারে। গ্রেফতারও হতে পারে। শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষক নিয়োগ স্কুল সার্ভিস কমিশনে দুর্নীতি হয়েছে। ৩৪ বছর বামেরা রাজ্য চালিয়েছে কেউ আঙ্গুল তুলে বলতে পারবে না। কারণ, আমাদের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। সিবিআইকেও আসতে হয়নি। লড়াই একদিনের ব্যাপার নয়। লড়াইটা নীচ থেকে ধীরে ধীরে চালিয়ে যেতে হবে। একদিন মিটিং-মিছিল করলে হবে না। লাগাতার এই লড়াই জারি রাখতে হবে।”
৭৭ সালের উদাহরণ টেনে দিল্লির সঙ্গে তুলনা করেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বলেন, “ভোটে যাই হোক ভোটের পরে নিচু তলার লড়াইটা জারি রাখাটা আসল লড়াই। জোট হোক বা না হোক ভোটের পরের লড়াটা চালিয়ে যেতে হবে।’
এইদিন বক্তব্য রাখেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “দেশ ও রাজ্যে অদ্ভুত রকম ও দম বন্ধের পরিস্থিতি। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখছে কী করবে কেউ জানে না মহিলাদের নিরাপত্তা নেই। গ্রাম শহরে লুঠরাজ চলছে। এই লুঠরাজ আগে বাংলায় ছিল না। ওদের ইশারায় সকলকে চলতে হবে, তা না হলে অন্যত্র বদলি করে দেবে। আবার পতাকা ধরলে নিয়ে চলে আসবে। ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি চলছে। বাংলাকে ভাগ করা হয়েছে। আমাদের সময় দাঙ্গাকারীরা বাংলায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। দিল্লি থেকে এসে ভোটের সময় চোখ রাঙিয়েছে। একই হেলিকপ্টার তৃণমূল-বিজেপি ভাড়ায় নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলেছে। একদল বলে আমি তৃণমূল, আর একদল বলে আমি বিজেপি।”
দল বদলের এই রাজনীতিকে সুজন কটাক্ষ করে বলেন, “জাতের ঠিক নেই তোমাদের রাজনীতির ঠিক নেই। তোমাদের মনুষ্যত্বের ঠিক নেই। তোমরা বিভাজন জানো তোমরা ক্ষমতা জানো। বাংলার মানুষ পছন্দ করছে না। কিন্তু এমন দাপট, মানুষ যেন কেমন একটা বোকা হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে চুপ করিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। ভয় দেখানো হচ্ছে আমাদের। ভোটের পর থেকে এনআরসি শব্দ নিয়ে কেউ আর প্রশ্ন তুলছে না। জ্যোতি বসু থাকলে বাইরে থেকে এসে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের বাপের হিম্মত হত না পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ভয় দেখানো ও চোখ রাঙাতে পারত না। নেহত মমতা ব্যানার্জি। দুইয়ে দুইয়ে চার কোথায় গিয়ে মিলছে ফুসফুস গুজগুজ। সলাপরামর্শ আলোচনা চলছে, ইনিও খুশি উনিও খুশি। কিন্তু মানুষের কোন লাভ হল না।” এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী, সিপিএম নেতা ফুয়াদ হালিম সহ অন্যান্যরা।
আরও পড়ুন: Fox Attack: মাঠে ধান কটছিলেন ওঁরা, হঠাৎ মাংস খুবলে নিয়ে পালাল শিয়ালের দল!