WB Panchayat Polls 2023: একটা ভাঙড়ই নাকানিচোবানি খাওয়াল পুলিশকে, এখনও বাকি গোটা নির্বাচন
WB Panchayat Polls 2023: "নির্বাচনে কেন্দ্রীয় মোতায়েন করলে ভাল হয়। রাজ্য নিজের মতো বাহিনী দেবে। ধরুন, কলকাতা থেকে পুলিশ হুগলি এবং হাওড়ার পাঠালেন। সে ক্ষেত্রে শহরে তো বাহিনী কম পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন কমিশনের।"
ভাঙড়: ‘ভাঙড়’ (Bhangar), স্রেফ এই একটা এলাকাই আজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরাপত্তায় আদৌ রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট কিনা। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকা। বিডিও অফিসের সামনেই পড়তে থাকে মুড়িমুড়কির মতো বোমা। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই ছবি। মূলত, আইএসএফ-সিপিএমের অভিযোগ, মনোনয়ন দিতে বাধা দেওয়ায় তৃণমূল এলাকায় বোমাবাজি করে। আইএসএফ কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমা, এমনকি গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। পাল্টা প্রতিরোধ গড়লে অগ্নিগর্ভের চেহারা নেয় ভাঙড়। বিডিও অফিসের ১০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই চলতে থাকে বোমাবাজি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে, চলতে থাকে বেপরোয়া ইটবৃষ্টি। পরিস্থিতি সামলাতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। হামলায় আহত হন একাধিক পুলিশ কর্মীও। কাশীপুর থানায় এসআই সেলিম মির্জার হাতে ক্ষত তৈরি হয়। রক্তাক্ত হন তিনিও। অধঃস্তনরাই তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য পাঠান। পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছয়, যেখানে দেখা যায়, পুলিশই বাধ্য হয়ে পিছু হটছে। ধরপাকড়ও হয়েছে বটে, তবে এদিন ভাঙড় যে ‘খেলা’ দেখিয়েছে, তাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন তথা রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিস্তর। কোথায় কমিশনের নজরদারি? কোথাইবা নিরাপত্তা? আদৌ কি কেবল পুলিশ দিয়েই সম্ভব বাংলার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা? ‘ভাঙড়’ আজ তা দেখিয়ে দিল।
পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে আক্রান্ত এসআই সেলিম মির্জা বলেন, “৩০০-৪০০ লোক জমায়েত করছে এক-একটা জায়গা। জমায়েত সরাতে গেলেই বেপরোয়া ইট ছুড়ছে। পুলিশকে লক্ষ্য করেই বোমা ছুড়ছে। আমাকে মেরে রক্ত বার করে দিয়েছে।কাচের বোতলে হাত কেটেছে।” একটা সময়ে দেখা যায়, পুলিশ একটি দোকানের তাঁবুর পিছনে ইটবৃষ্টি থেকে লুকানোর আপ্রাণ প্রয়াস চালায়।
এমনিতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরাপত্তার ইস্যুটি এখন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপটি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন। কংগ্রেস, বিজেপির তরফ থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবিতে ইতিমধ্যেই দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। ভোটে বাহিনীর পক্ষেই সওয়াল করেছেন প্রধান বিচারপতি।
সোমবারের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, “নির্বাচনে কেন্দ্রীয় মোতায়েন করলে ভাল হয়। রাজ্য নিজের মতো বাহিনী দেবে। ধরুন, কলকাতা থেকে পুলিশ হুগলি এবং হাওড়ার পাঠালেন। সে ক্ষেত্রে শহরে তো বাহিনী কম পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন কমিশনের।”
বাহিনী সঙ্কট তো আলাদাই বিষয়, কিন্তু রাজ্যে কোথাও একটি অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হলে বাংলার পুলিশ আদৌ কি সবটা একা হাতে সামলে নিতে পারবে? অন্তত সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি পরিস্থিতি সেই প্রশ্নই তুলে দিচ্ছে। সে কালিয়াগঞ্জে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগই হোক, কিংবা এগরায় বোমাবাজি। প্রতি ক্ষেত্রেই ‘ডিউটি’তে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছে পুলিশকে। রক্তাক্ত, নিগৃহীত হতে হয়েছে তাঁদেরও। ফলে বাংলার ভোটে বাহিনী-র দাবি আরও জোরাল হয়ে উঠল।