AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Sparrow House: পিয়ালী-কুন্তলের স্প্যারো হাউসে মহানন্দে বাস করছে চড়ুই, শালিক, ফিঙের দল

পাখি না থাকলে আমাদের ইকো সিস্টেম নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা ও আমাদের আগামী প্রজন্ম চরম ভোগান্তির শিকার হবে।

Sparrow House: পিয়ালী-কুন্তলের স্প্যারো হাউসে মহানন্দে বাস করছে চড়ুই, শালিক, ফিঙের দল
জলপাইগুড়িতে স্প্যারো হাউস।
| Edited By: | Updated on: Mar 20, 2023 | 7:03 PM
Share

জলপাইগুড়ি: কংক্রিটের জঙ্গল, ৫জি-র রেডিয়েশন সহ অত্যাধুনিক জীবনযাত্রার বহরে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে পায়রা, চড়ুই, শালিক, কাকের বাসস্থান। যার ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে এই সমস্ত পাখি। বিশেষত, শহরাঞ্চলে কাক, পায়রা, চড়ুইয়ের থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এদেরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তাই চড়ুইদের জন্য আস্ত একটা ‘স্প্যারো হাউস’ (Sparrow House) গড়ে তুলেছেন পিয়ালী আর কুন্তল। জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) এই দম্পতির সাহচর্যে ওই স্প্যারো হাউসে এখন মহা সুখে রয়েছে চড়ুই পাখির দল। ২০ মার্চ, ‘বিশ্ব চড়ুই দিবস’ (World Sparrow Day)-এ TV9 বাংলার ক্যামেরায় উঠে এল সেই স্প্যারো হাউসের ছবি।

জলপাইগুড়ি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বামন পাড়ার ঘোষ দম্পতির বাড়িটিই বর্তমানে পরিচিত স্প্যারো হাউস নামে। কুন্তল ঘোষ, পিয়ালি ঘোষ আর তাঁদের ছোট্ট ছেলে প্রায়ণ ঘোষের আতিথেয়তায় ঘোষ বাড়িটিকে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভেবে নিয়ে দিনভর নিজেদের রাজত্ব চালায় কয়েকশো চড়ুই। শুধু চড়ুই নয়, রয়েছে ঘুঘু, ফিঙে, বুলবুলি সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় পাখি। তাদের খাওয়া-দাওয়ায় যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকেও নজর রয়েছে ঘোষ দম্পতি ও তাঁদের ছোট্ট ছেলে প্রায়ণের। তাই তাঁরা পাখিদের জন্য নিজেদের হাতে তৈরি করেছেন বার্ড ফিডার। সেটিতে রাখা চাল খেয়ে ছাদেই লাফিয়ে বেড়ায় চড়ুই, ঘুঘু, ফিঙে, ল্যাজঝোলা পাখিরা। মাটির পাত্রে জলও রয়েছে। চাল ঠুকরে খেয়ে মাটির পাত্রে রাখা জল খেয়ে তাতেই ডুব দেয়।

Sparrow

চড়ুইয়ের জন্য তৈরি কৃত্রিম ঘুলঘুলি।

শুধু চাল খেয়ে পাখিদের অরুচি হতে পারে। সেদিকেও খেয়াল রয়েছে ঘোষ দম্পতির। তাই কেবল পাখিদের জন্যই ছাদের উপর টবে যত্ন করে লাগানো হয়েছে আম,জাম,কাঁঠাল,পেয়ারা,পেঁপে, লিচু,সবেদা ইত্যাদি ফলের গাছ। পাশাপাশি রয়েছে টমেটো, লঙ্কা,সরিশা,পালং শাখ সহ বিভিন্ন ধরনের সব্জি। এর সঙ্গে রয়েছে তুলসী, নয়নতারা, অ্যালোভেরা, নিসিন্দা সহ বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছও। তাই ভোর হতেই এই সমস্ত গাছের উপর হামলে পড়ে পাখির দল। সেই মনোরম এই দৃশ্য আর কিচিরমিচির শব্দ যেন পৌঁছে দেয় এক অন্য জগতে। বেলা গড়াতেই অবশ্য স্প্যারো হাউস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে চড়ুই, শালিক, ফিঙে দল। কিন্তু, ফের বিকেল হতেই ঝাঁক বেঁধে তারা হাজির হয় ঘরে। অবিরাম এই দৃশ্য দেখে চোখ ফেরানো মুশকিল।

Sparrow

স্প্যারো হাউসে পাখিদের জল ও খাবারের সংস্থান ঘোষ দম্পতির।

স্প্যারো হাউসের মালকিন পিয়ালী দেবনাথ ঘোষ পেশায় হাই স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি বলেন, “এই পাখিদের জন্য খুব বেশি কিছু করতে হয় না। শুধু দিনে একবার একটা পাত্রে চাল ও একটা পাত্রে জল দিলেই হয়ে যায়। আর ছাদের গাছ গাছালি সামান্য পরিচর্যা করলেই বাড়িতে ঝাঁক বেঁধে পাখি চলে আসে। যা অত্যন্ত সহজেই করা যায়। আর পাখিদের জন্য এইসব করতে বেশ ভালোই লাগে।”

আর ছোট থেকেই পাখি সংরক্ষণ করা নেশা কুন্তলবাবুর। কোনও পাখি অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে এনে শুশ্রূষা করতেন তিনি। তারপর সুস্থ করে আবার তাকে মুক্ত প্রকৃতিতে ছেড়ে দিতেন। বছর দশেক আগে তিনি বিখ্যাত পরিবেশবিদদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে জানতে পারেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, নগরায়ন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে গোটা বিশ্ব থেকে চড়ুই পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে প্রভাব পড়েছে জলপাইগুড়িতেও। চড়ুই সাধারণত থাকতো ঘুলঘুলিতে। নগরায়নের ফলে তৈরি হওয়া আধুনিক ফ্ল্যাটে ঘুলঘুলি নেই। তাই ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ওদের বাসস্থান। তারপরই তিনি বাড়িতে চড়ুই পাখির বাসস্থান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং স্প্যারো হাউস গড়ে তোলেন। চড়ুই পাখির জন্য বাড়িতে ঘুলঘুলি তৈরি করা থেকে জাভা স্প্যারো, লাভ বার্ড,বেঙ্গলি,ফিঞ্চ সহ বিভিন্ন ধরনের কেজ বার্ড গড়ে তোলেন তিনি। তারপর প্রথমে ছাদের কোণায় একটা পাত্রে চাল ও একটা পাত্রে জল দিয়ে রাখতেন। প্রথম প্রথম দু-একটা চড়ুই পাখি আসতো। কয়েক বছর যেতে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই সহ অন্যান্য পাখিরা তাঁর বাড়িতে আসছে। কুন্তলবাবুর কথায়, “পাখি না থাকলে আমাদের ইকো সিস্টেম নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা ও আমাদের আগামী প্রজন্ম চরম ভোগান্তির শিকার হবে।”

কুন্তলবাবুর মতো অবশ্য সকলের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং চড়ুই পাখিকে সমাজে ফিরিয়ে আনতে পালিত হয় বিশ্ব চড়ুই দিবস। ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ২০ মার্চ সারা পৃথিবী জুড়ে বিশ্ব চড়ুই দিবস হিসেবে পালন করেন পরিবেশকর্মীরা। জলপাইগুড়ি স্প্যারো হাউসের মালিক-মালকিন অবশ্য কেবল একদিন নয়, সারা বছরই পক্ষীদের ব্যাপারে বিশেষ যত্নশীল।