নিউ ইয়র্ক: কিছু বছর আগেও দেশের সিংহভাগ স্কুল-কলেজে (School-College) মোবাইল নিয়ে প্রবেশে ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। কালের নিয়মে তা আর না থাকলেও তাই বলে শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষকের পাশে দেখা যাবে পর্নোগ্রাফি ছবি? শুনতে অবাক লাগলেও এই পদ্ধতিতেই পর্নোগ্রাফি ছবির ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকার (America) উটা শহরের ওয়েস্টমিনস্টার কলেজ, যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা বিশ্বে। যদিও তাতে বিশেষ আমল দিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমনকী একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই নয়া সিদ্ধান্তের কথা জানানোও হয়েছে কলেজের তরফে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘রবিবার রাতের ফুটবল ম্যাচের তুলনায় পর্নোগ্রাফি অনেক বেশি জনপ্রিয়। কোটি কোটি ডলারের এই শিল্পের যে একটা সাংস্কৃতিক পরিচয় আছে, সেটাকে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য’। একইসঙ্গে তাঁদের এ-ও দাবি, যৌনতার ক্ষেত্রে আদপে যে কোনও জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, শ্রেণির ভেদাভেদ নেই। সেই বার্তা দিতেই ‘ফিল্ম ৩০০০ পর্ন’ নামের এই ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তাদের এ-ও দাবি, যৌনতা বিষয়ক আলোচনা পর্ন ছবি ছাড়া সম্ভব নয়। আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যৌনতা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যৌনতা নিয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে কৈশোর থেকে শুরু করে বৈবাহিক জীবনে সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষ। বাড়ছে নারী নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের মতো ঘটনা। আর সেই কারণেই জনমানসে যৌনতা নিয়ে সঠিক জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই, এই বিষয় নিয়ে শিক্ষার পরিসরে আলোচনা করতে গেলে তা কেবল বই হাতে নিয়ে সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে ক্লাস করাতে গেলে ছবি-ভিডিয়ো অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলার(West Bengal) শিক্ষামহল থেকে আসছে নানা মত। অধ্যাপক দেবাশিষ সরকারের কথায়, “এই সমস্ত বিষয়গুলি গোটা বিশ্বে দ্রুততার সঙ্গে বদলে যাচ্ছে। আজকে আমরা যে সমাজে রয়েছি, কলেজ ও ক্লাসরুম তো তারই অঙ্গ। বিশ্বায়ন পরবর্তী সময়ে যে কোনও দেশের একক সংস্কৃতি বলে আর কিছু থাকছে না। তাই ওটা ভালো কী মন্দ, তা অন্য আলোচনার বিষয়। কিন্তু, আজ থেকে কমপক্ষে দেড় দশক আগে আমরা স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে যৌন শিক্ষার বিষয়টি চর্চায় আনা যায় কিনা, সেই বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। তবে সরাসরি সেক্স এডুকেশন নাম না দিয়ে জীবনশৈলীর চর্চা নাম দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই পাঠ শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে থাকা দরকার, একেবারে স্কুল শিক্ষা স্তর থেকে। তবে ক্লাস কোন পদ্ধতিতে হবে, কোন মাত্রায় হবে, কোন পদ্ধতিতে ছাত্রদের কাছে বিষয়গুলিকে নিয়ে যাওয়া হবে, সেটা একটা অন্য আলোচনার বিষয় ছিল। অন্যদিকে এ বিষয়ে সমাজ কী ভাবছে, সেটা একটা অন্য ফ্যাক্টর। তাই বিষয়টিকে খোলা মনেই নেওয়া উচিৎ”।
এই প্রসঙ্গে আর এক শিক্ষাবিদ আবদুল মতিন বলছেন, “ভারতের বুকে এটা সম্ভব নয়। আমাদের সমাজ আসলে অনেকগুলি স্তরে বিভক্ত। এই সমস্ত স্তর থেকে যত পড়ুয়া পড়তে আসেন স্কুল-কলেজে, তাদের সকলের কাছে এই বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনও প্রথমসারির উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের কাছে এটা গবেষণার বিষয় হলেও সামগ্রিক ভাবে সমাজ এটা মেনে নেবে না। কারণ, পর্নোগ্রাফিতে নারী মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। আমাদের সংবিধানও এতে সম্মতি দেয় না। সংবিধান প্রতিটা লিঙ্গের সম-মর্যাদার কথা বলে। কিন্তু পর্নোগ্রাফিতে তা দেখা যায় না। তবে সেক্স এডুকেশনের সঙ্গে পর্নের অনেক তফাৎ রয়েছে। স্কুলেও সেক্স এডুকেশন হতে পারে। কিন্তু সেক্স এডুকেশনের মাধ্যম কখনও পর্ন হতে পারে না”।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার পর্ন ছবি সারা বিশ্বই লুফে নেয়! কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। তাই এর জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু তাই বলে একেবারে ক্লাস রুমের অভ্যন্তরে পর্ন ছবির পাঠ? দেশের এই প্রাইভেট লিবারেল আর্টস কলেজের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকার নাগরিক মহলেও। এই সিদ্ধান্তকে কেউ পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন, কটাক্ষও করেছেন কেউ কেউ। প্রগতিশীলতার মোড়কে শালীনতার বেড়া ভাঙছে এই কলেজ, মত অনেকের। তবে কেউ কেউ আবার কলেজের এই সিদ্ধান্তকে ‘যুগোপযোগী’ বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে বিতর্কের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। সরব হয়েছেন দেশ-বিদেশের অভিভাবকেরাও। তাঁদের প্রশ্ন, ‘অঙ্ক-ইংরেজির শিক্ষা বাদ দিয়ে এখন ক্লাসে পর্নোগ্রাফির পাঠ দেওয়া হবে! এ কেমন দেশ’?
আরও পড়ুন- ‘যোগীর পাশাপাশি দায় নিতে হবে মোদীকেও’, প্রয়াগরাজে পা রেখেই তোপ দোলার