পূর্ব মেদিনীপুর: রাজ্যের একমাত্র বিরোধী দলনেতা তিনি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে অন্যতম প্রতিপক্ষও বটে। তিনি নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। একুশের ভোটপর্ব মিটতেই নিজ এলাকায় জনভিত্তি প্রতিষ্ঠায় মন দিয়েছেন অধিকারী পরিবারের ‘মেজ ছেলে’। বাংলায় আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর (Cyclone Yaas) মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই পথে নেমেছেন শুভেন্দু। বিগত দুদিন ধরেই বৈঠকের পর বৈঠক করেছেন প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে। আশ্বস্ত করেছেন গ্রামবাসীদের। মঙ্গলবার, নয়াদিল্লির বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে নন্দীগ্রাম (Nandigram) থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন শুভেন্দু। নয়াদিল্লি থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)।
এদিন বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, “ইয়াসকে ঠেকাতে ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। আমি নিজে নন্দীগ্রামের সমস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। গ্রামবাসীদের জীবন রক্ষাই আমার একমাত্র কাজ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।” এরপর রাজ্য সরকারকে তোপ দেগে ‘নন্দীগ্রামের নায়ক’ বলেন, “রাজ্য়ে একটা অন্যধরনের প্রশাসন চলছে। চূড়ান্ত অসহযোগিতা সত্ত্বেও চেষ্টা করছি কী করে কাজ করা যায়। নন্দীগ্রামের ২১ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ জেলা প্রশাসন। আশা করছি, ওঁরা সরিয়ে নেবেন। আমরা ১০ হাজার মানুষকে দুর্গত এলাকা থেকে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছিলাম, তারমধ্যে ৩হাজার গ্রামবাসীকে সরিয়ে আনতে পেরেছি। বাকিদেরকেও পারব বলেই আশা করছি। এছাড়া ঘরে ঘরে শুকনো খাবার বিলি ব্যবস্থাও করেছি। গ্রামবাসীদের সমস্ত সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করছি।”
এদিনের বৈঠকে আমফান (Amphan) স্মৃতি উসকে দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “আমফানের স্মৃতি এখনও যায়নি। যেভাবে দুর্নীতি ও চুরি হয়েছিল তা ভুলিনি। আমি নিজেও ওই প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমি জানি, কী কী হয়েছিল। তবে ইয়াসের ক্ষেত্রে তা হতে দেব না। ত্রাণ নিয়ে যাতে কোনওরকম দুর্নীতি না হয়, সে বিষয়ে কড়া নজরদারি রাখা হবে। আমি সবসময় গ্রামবাসীদের পাশে আছি।” উল্লেখ্য়, বঙ্গভোটে আমফানের ত্রাণ দুর্নীতি বরাবর বিজেপির ভোটবাক্সের ‘অ্যাজেন্ডা’ হয়েছিল। খোদ শুভেন্দুও বারবারই বলে এসেছেন আমফানের সময় ‘ত্রিপল চুরি’ ‘চাল চুরি’ হয়েছিল। ফের একবারসেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেই ইয়াস মোকাবিলায় মাঠে নামলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার সকালেই ওড়িশা উপকূলের ধামড়া ও চাঁদবালিতে পৌঁছে যাবে ইয়াস। সেখানেই ল্যান্ডফল। বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে চলা ঘূর্ণিঝড় সেদিন বিকেলেই তাণ্ডব চালাবে পারাদ্বীপ এবং সাগরের মাঝ বরাবর বালেশ্বরে। এরপর তা ক্রমশ এগিয়ে যাবে ঝাড়খণ্ডের দিকে। মৌসম ভবনের আশঙ্কা, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলার দুই জেলা। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। বুধবার পূর্ণিমা এবং ভরা কোটালের কারণে স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে জলের স্তর তুলনায় বেশি থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেখা দিতে পারে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসও।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে ‘ইয়াস’, পাশে থাকবেন তিনি, গ্রামবাসীদের অভয়বার্তা দিলেন কাঁথির ‘ভূমিপুত্র’ শুভেন্দু