উত্তর ২৪ পরগনা: “আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, তাই এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না।” এমন কথা জানিয়ে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে ট্রান্সফরমারে তালা লাগিয়ে দিলেন স্থানীয় তৃণমূল (TMC) পঞ্চায়েত (Panchayat) সদস্যা। তৃণমূল নেত্রীর ইচ্ছাতে মঙ্গলবার বিকাল থেকে অন্ধকারে ডুবে রইল উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার নতুনগ্রাম সুবাসিনী বিদ্যালয়ের আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা!
জানা গিয়েছে, কোনও কারণে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা কাজল মণ্ডলের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। এর ফলে গোপালনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের সদস্যা ট্রান্সফরমারে তালা লাগিয়ে দেন। নিজে একটি তালা এনেছিলেন। বাকি একটা স্থানীয় এক অননুগামীর কাছে তিনি চেয়ে নেন বলে জানাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পঞ্চায়েত সদস্যার এমন ‘জনসেবার’ ভড়ং দেখে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গোপাল নগর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান।
এর পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। শেষে মঙ্গলবার রাত ১১টার পর ট্রান্সফরমারের তালা খুললেও বিদ্যুৎ চালু করতে ব্যর্থ হয় তারা। পুলিশের বিরুদ্ধে তৃণমূলের মেম্বারের তাঁবেদারি করার অভিযোগ এনে তাদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন বাসিন্দারা।
বেআইনিভাবে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় পঞ্চায়েত সদাস্যার শাস্তির দাবি করেছে নবাসিন্দারা। যদিও এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছেন ওই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা কাজল মণ্ডল। সাংবাদিকরা খবর করতে গেলে তাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন কাজল মণ্ডলের অনুগামীরা। যদিও তিনি নিজেই যে ট্রান্সফরমারে তালা লাগিয়েছেন তার ছবি ধরা পড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ওইই পঞ্চায়েত সদস্যা দু’ দুটি তালা দিয়ে ট্রান্সফরমারে তালা বন্ধ করে দেন। এদিকে প্রায় ১৫০ পরিবারকে অন্ধকারে রাখা নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ উগরে দিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয়দের কথায়, “মানুষের জিনিসকে নিজের ইচ্ছামতো বন্ধ করে দেওয়া কেমন পঞ্চায়েত সেবা। কারও বাড়িতে অসুস্থ রোগী রয়েছেন, কারও বাড়িতে পড়াশোনা করা ছেলেমেয়ে রয়েছেন। এ কেমন ব্যবহার।” পঞ্চায়েত সদস্যাকে বলতে গেলে তিনি নাকি কোনও কথা শোনেননি। বলেন, “আমার বাড়িতে নেই যখন কারও বাড়িতে থাকবে না।”
এ নিয়ে অবস্থানে বসেনন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়েবিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বনস্পতি দেবের কটাক্ষ, এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। পুলিশের মদতে গ্রামে সন্ত্রাস চালাতে ও লুঠ করবে বলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করেছিল তৃণমূল। এলাকার মানুষকে ধন্যবাদ জানাব সেটা রুখে দেবার জন্য। যদিও তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার কাজের দায় নিজেদের কাঁধে নিতে নারাজ দল।
বনগাঁ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত জানিয়েছেন, “আইনের বাইরে গিয়ে কেউ কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিজেপির বক্তব্যের কোন প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Panihati: সরকারি হাসপাতালের বেডের নীচে জল থইথই, ভাসছে ময়লা কাপড়, ফেলে দেওয়া সিরিঞ্জ!