ছোট থেকেই জয় শ্রী রাম বলতাম, মঞ্চে বলতে পারিনি, এ বার বলব: জিতেন্দ্র তিওয়ারি
প্রত্যাবর্তনের পর কোনও পদ ফিরে না পেলেও জিতেন্দ্রকে (Jitendra Tiwari) জাতীয় স্তরের মুখপাত্রের দায়িত্ব দিয়েছিল দল। যদিও সেসব 'মায়া' কাটিয়ে এ বার পাকাপাকিভাবে পদ্ম পতাকা (BJP) তিনি হাতে তুলে নিলেন।
হুগলি: জল্পনা সত্যি করে বিজেপিতে (BJP) যোগ দিলেন পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি (Jitendra Tiwari)। এ দিন বৈদ্যবাটির সভা থেকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে তিনি গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নেন আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন প্রশাসক। এর আগেই অবশ্য তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সেই সময় ইউটার্ন মেরে তৃণমূলেই থেকে গিয়েছিলেন আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন প্রশাসক। দলে প্রত্যাবর্তনের পর কোনও পদ ফিরে না পেলেও জিতেন্দ্রকে জাতীয় স্তরের মুখপাত্রের দায়িত্ব দিয়েছিল দল। যদিও সেসব ‘মায়া’ কাটিয়ে এ বার পাকাপাকিভাবে পদ্ম পতাকা তিনি হাতে তুলে নিলেন।
দিলীপ ছাড়াও এ দিনের সভায় হাজির ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষেরা। বিজেপিতে যোগ দিয়ে জিতেন্দ্র বলেন, “আমি আজ থেকে মনের ভাবনা স্বাধীনভাবে খুলে বলার সুযোগ পাব। কারোর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করতে চাই না। কিন্তু, বিগত দু বছর ধরে মনের ভাবনার বহিঃপ্রকাশ করার সুযোগ ছিল না। মনে এক কথা থাকত বাইরে আরেক কথা বলতে হত। এখন থেকে কোনও কৃত্রিম ভাব থাকবে না। জয় শ্রী রাম বলতাম ছোট থেকে, তবে কোনও দিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলতে পারতাম না। আজ থেকে মঞ্চেও বলব।” অন্যদিকে দিলীপ ঘোষ এ দিনের দলবদল নিয়ে বলেন, “বিজেপির মঞ্চে এসেই মনের কথা বলা যায়, মনের কাজ করা যায়। সেই কারণে সবাই এখন বিজেপিতে আসছেন।”
প্রসঙ্গত, গত বছর ডিসেম্বর মাসেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়েছিল একাধিক তৃণমূল নেতার দলবদল নিয়ে। শুভেন্দু অধিকারী ও সুনীল মণ্ডলের মতো নাম গেরুয়া শিবিরে শামিল হলেও জিতেন্দ্র নামে আপত্তি ছিল বিজেপি নেতাদের একটা বড় অংশের। যা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনেই ক্ষোভ উগড়ে দেন বিজেপির একাধিক নেতা-সাংসদ। ফলে বাকিরা দলবদল সেরে নিলেও আটকে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। বিপাক বুঝে তৃণমূলেই তিনি ফেরেন। তবে বিজেপি যে জিতেন্দ্রকে দলে নেওয়ার বিষয়ে আগাগোড়াই কিছুটা নমনীয় ছিল তা মুরলীধর সেন লেনের পরবর্তী পদক্ষেপেই সাফ হয়ে যায়। জিতেন্দ্রর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় শোকজ করা হয় দলের একাধিক প্রথম সারির নেতাকে।
আরও পড়ুন: গো-হত্যা বন্ধের বিরোধিতায় যোগীকে বাপবাপান্ত অনুব্রতর
অন্যদিকে জিতেন্দ্র কলকাতায় রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে এক বৈঠক করেন এবং জানান তিনি তৃণমূলেই রয়েছেন। নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সৈন্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে জিতেন্দ্রকে বলতে শোনা গিয়েছিল যে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তবে দ্বিতীয়বার ফিরে এলেও আসানসোল পুরসভার প্রশাসক পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি জিতেন্দ্রকে। দলেও কোনও পদও ফিরে পাননি তিনি। তবে জাতীয় স্তরে তৃণমূল মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন বেশ কিছুদিন।
যদিও তৃণমূলে তাঁর ক্যামব্যাক ইনিংস বেশিদিন স্থায়ী হল না। মাস তিনেকের মধ্যেই পড়ে গেল উইকেট। শেষমেশ বিজেপিতেই গেলেন জিতেন্দ্র। অন্যদিকে, তাঁকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে নেতারা সরব হয়েছিলেন, তারা এ দিন সুর নরমই রেখেছেন। তবে ভুলে গেলে চলবে না, জিতেন্দ্র যখন বেসুরো হয়েছিলেন, তখন উত্তরবঙ্গ থেকে ফোন করে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তারপরও যে এই দাপুটে নেতার মানভঞ্জন হয়নি, তা কার্যত আজকের পদক্ষেপেই সাফ হয়ে গেল।
আরও পড়ুন: দলবদলু বিধায়ক হলেই টিকিট পাকা বিজেপিতে